শিক্ষক লাঞ্ছনা, তবু সেলিম ওসমানের পক্ষে ৪২ ব্যবসায়ী সংগঠন

ধর্ম সম্পর্কে কটূক্তির অভিযোগ এনে প্রধান শিক্ষককে কান ধরে ওঠবস করানোর ঘটনায় সারা দেশে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যেই সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের অন্তর্ভুক্ত ৪২টি সংগঠন।
আজ বুধবার নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে ৪২ ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রচুর সংখ্যক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকও উপস্থিত ছিল। সংবাদ সম্মেলনে স্কুলছাত্র রিফাত ও তাঁর মায়ের ভিডিওতে ধারণ করা বক্তব্য প্রচার করা হয়।
urgentPhoto
সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) বর্তমান সভাপতি।
সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী নেতারা দাবি করেন, ঘটনার খণ্ডচিত্র প্রকাশ করে গণমাধ্যম বিষয়টিকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে।
গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার কল্যাণদী এলাকার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ এনে কান ধরে ওঠ-বস করিয়ে শাস্তি দেন জাতীয় পার্টির স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত বলেছেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। ধর্ম নিয়ে কোনো কটূক্তি তিনি করেননি।
এ ঘটনার ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। শিক্ষকসমাজের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানসহ দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে।
এদিকে, গত সোমবার শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে বিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির বরখাস্তের চিঠি পান।
এ ঘটনায় সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যও দুঃখজনক ও লজ্জাজনক বলে উল্লেখ করে এ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। এর মধ্যেই নারায়ণগঞ্জে ৪২টি ব্যবসায়ী সংগঠন সেলিম ওসমানের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চেম্বারের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট মঞ্জুরুল হক। তিনি উল্লেখ করেন, একটি গোষ্ঠী অযাচিত ও অনভিপ্রেত অপপ্রচার চালাচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে সত্য বেরিয়ে আসবে। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত অপপ্রচার না করার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান।
মঞ্জুরুল হক আরো বলেন, ঘটনার দিন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান জনরোষের হাত থেকে প্রধান শিক্ষককে বাঁচাতে চরম অসুস্থ শরীর নিয়েও সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। প্রধান শিক্ষক সেলিম ওসমানকে কাছে পেয়ে ত্রাণকর্তার মতো জীবন বাঁচাতে আবেদন করেছিলেন। অভিযোগ স্বীকার করে প্রধান শিক্ষকের সম্মতি অনুযায়ী যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন তা দৃষ্টিকটু ও দুঃখজনক হলেও ওই পরিস্থিতিতে অন্য কোনো পথ খোলা ছিল না।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহসভাপতি আসলাম সানি বলেন, ‘গণমাধ্যমে এর খণ্ডচিত্র প্রকাশ করা হয়েছে। এত দিন ধরে এ বিষয়ে আমরা খণ্ডিত ও আংশিক বক্তব্য লক্ষ করেছি। একদিকে বলা হয়েছে, সেলিম ওসমান একজন প্রধান শিক্ষককে কান ধরে ওঠবস করিয়েছেন। অপরদিকে, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ উঠেছে। গণমাধ্যমের খবরে ওই এলাকার মানুষের অনুভূতিকে পাশ কাটানো হয়েছে।’
এ সময় আসলাম সানি আরো বলেন, সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জের হানাহানির রাজনীতি দূর করেছেন। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির (এফবিসিআইএ) সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী, পরিচালক প্রবীর কুমার সাহা, বিকেএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট মনসুর আহম্মেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।