সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি চান জেলে-বাওয়ালিরা

পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের শুধু ধানসাগর স্টেশনেরই একই এলাকায় সম্প্রতি পরপর চারবার আগুন লাগার ঘটনায় বনে প্রবেশের অনুমতি (পাস পারমিট) দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। এতে জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালসহ সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল মানুষ এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে।
শরণখোলা বনজীবী কামাল হোসেন বলেন, ‘বনে আগুন দিয়েছে অসাধু লোকজন। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সবাই তাদের চেনে। তাদের আটক করে বিচার করা হোক, এটা আমরাও চাই। কিন্তু আমরা যারা সাধারণ লোকজন বনে গিয়ে মাছ ধরে ও জ্বালানি সংগ্রহ করে পরিবার চালাই, আমাদের কী দোষ?’
জিউধারার সুলতান খাঁ বলেন, ‘জঙ্গলে আগুন লাগার পর আমরা আমাদের ছেলেমেয়ে ও আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে আগুন নিভাইছি, যাতে আগুনে বনের বেশি ক্ষতি না হয়, যাতে পাস বন্ধ না হয়। এত কষ্ট করে আগুন নেভানোর পরও আমাদের পাস বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক ধারদেনা আছে। আমরা এখন কোথায় যাব?’
সুন্দরবনে প্রতিদিন মাছ ধরে সংসার চলে ঢেউতলার রবিউল জোমাদ্দারের। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার চারটা মেয়ে। গত দুই দিনে আমি তাদের একবেলাও ভাত খাইতে দিতে পারি নাই। খিধায় (ক্ষুধা) মাটিতে গড়াগড়ি করে। আমাগো একটু পাসের ব্যবস্থা করে দেন।’
এমনই আকুতি রয়েছে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল আরো অনেকের। অনুমতি না থাকায় কেউ ভয়ে বনে প্রবেশ করতে সাহস পাচ্ছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুন্দরবনে পরপর চারবার আগুন লাগার ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা ও নাংলী ক্যাম্পের তিন বনপ্রহরী বরখাস্ত হয়েছে। এর পর থেকে ওই এলাকায় কঠোর হয়েছেন বনপ্রহরীসহ বন বিভাগের সদস্যরা। কোনো লোকই যাতে বনে প্রবেশ করতে না পারে ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটাতে না পারে, সে জন্য ধানসাগর স্টেশনের বনকর্মীরা পাঁচটি দলে বিভক্ত হয়ে কাজ করছে। বনের মধ্যে প্রতিদিন দিন-রাতে পালাক্রমে পাহারা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে পুরো পূর্ব সুন্দরবনজুড়ে।
ধানসাগর স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ অনুযায়ী বনে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা সব সময় টহল দিচ্ছি। আশা করি, আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কেউই বনে প্রবেশ করে ক্ষতি করতে পারবে না।’
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার কারণেই সুন্দরবন সুরক্ষায় বনজীবীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি বনে প্রবেশের অনুমতি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যেসব দুর্বৃত্ত বনে আগুন দিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব অপরাধীকে আটক করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হলে এ থেকে অন্যরা শিক্ষা নেবে। এতে ভবিষ্যতে কেউই এ ধরনের অপরাধ করতে সাহস পাবে না।’
কবে নাগাদ আবারও বনে প্রবেশের অনুমিত দেওয়া হবে—জানতে চাইলে সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘যারা সুন্দরবনে আগুন দিয়েছে, তাদের দৃশ্যমান ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত বন কর্তৃপক্ষ পাস পারমিটের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তবে বন নির্ভরশীলদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্যও বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে সরকার। এর মাধ্যমে বনের ওপর চাপ অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করি।’