মংলায় অস্ত্র জমা দিয়ে মাস্টার বাহিনীর আত্মসমর্পণ

সুন্দরবনের জলদস্যু মাস্টার বাহিনীর প্রধান মোস্তফা শেখ ওরফে কাদের মাস্টারসহ ১০ দস্যু আত্মসমর্পণ করেছেন। মঙ্গলবার বেলা ৩টায় মংলার বিএফডিসি জেটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের হাতে ৫২টি আধুনিক আগ্নেয়ান্ত্র ও পাঁচ হাজার গুলি তুলে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন তাঁরা।
আত্মসমর্পণকালে মাস্টার বাহিনীর প্রধান মোস্তফা শেখ (৪৬) বলেন, ‘আমি ও আমার সহযোগীরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অস্ত্র জমা দিয়েছি। আমরা স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে চাই। আমরা চাই অন্যান্য বাহিনীও আমাদের মতো আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক।’
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, সুন্দরবনের বনদস্যু মাস্টার বাহিনী তাদের কৃতকর্ম ও তারা যে ভুল পথে গিয়েছিল, তারা যে সমাজের জন্য ক্ষতিকর মানুষ হয়ে গিয়েছিল- এটা তারা উপলব্ধি করেছে। এই উপলব্ধিতে তারা স্বেচ্ছায় তাদের ব্যবহৃত অস্ত্র-গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করেছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সুন্দরবনকে নিরাপদ এলাকা হিসেবে দেখতে চাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনাও তাই। সুন্দরবনের মৎস্যজীবী, জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়ালিরা যাতে নির্বিঘ্নে প্রতিদিনের কাজ-কর্ম করতে পারে এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ, র্যাবের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সমুদ্রে ও সুন্দরবন উপকূলে কোস্ট গার্ডের টহল বৃদ্ধি করার জন্য ইতালি থেকে চারটি জাহাজ আনা হয়েছে- যা শিগগিরই কোস্ট গার্ড বহরে যোগ হবে। ইতিমধ্যে কোস্ট গার্ডের লোকবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। সুন্দরবন এলাকায় র্যাবের আরো দুটি ব্যাটালিয়ন বাড়ানো হচ্ছে।’
সুন্দরবনের দস্যুদের প্রতি আহ্বান রেখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সব দস্যু বাহিনী যদি আত্মসমর্পণ করে তাহলে আনন্দিত হবো। অন্য দস্যুরা যদি মাস্টার বাহিনীর মতো স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে তাহলে তাদের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ফিরে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর যদি আত্মসমর্পণ না করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দস্যুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কোস্ট গার্ড, নৌপুলিশ, র্যাবের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে না এসে সুন্দরবনে যারা দস্যুবৃত্তিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
মাস্টার বাহিনীর প্রধান ছাড়া আজ যেসব সদস্য আত্মসমর্পণ করেন তাঁরা হলেন সোহাগ আকন্দ (৩৭), সোলায়মান শেখ (২২), সুলতান খাঁ (৫৮), ফজলু শেখ (৩৪), শাহীন শেখ (৩২), সুমন সরদার (২৬), আসাদুল ইসলাম (২৭), হারুন (২৪) ও আরিফ সরদার (২২)। তাঁদের বাড়ি বাগেরহাটের মংলা ও রামপাল উপজেলা, খুলনার দাকোপ ও কয়রা উপজেলা এবং সাতক্ষীরার তালা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল আনোয়ার লতিফ, পুলিশের খুলনা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মনিরুজ্জামান মিয়া, র্যাব ৮-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফরিদুল আলমসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
দস্যুদের আত্মসমর্পণ বিষয়ে র্যাব ৮-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফরিদুল আলম বলেন, এর মাধ্যমে সুন্দরবনের অন্যান্য দস্যু বাহিনীও অস্ত্র ত্যাগ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে উদ্বুদ্ধ হবে। তিনি আরো বলেন, আত্মসমর্পণ করা দস্যুদের বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে। তাঁদের পুলিশে সোপর্দ করা হবে। তবে তাঁদের সাজা কমিয়ে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ব্যাপারে বিশেষভাবে সহায়তা করা হবে।
যে কারণে দস্যু হলেন কাদের মাস্টার : আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাহিনীর প্রধান মোস্তফা শেখ ওরফে কাদের মাস্টার বলেন, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার পেড়িখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুলের কারণেই তাঁর এই দস্যুতার পেশায় আসা। তিনি আরো বলেন, বাবুল চেয়ারম্যান তাঁর ভাইকে হত্যা করিয়েছেন। তাঁদের বাড়িঘর ছাড়া করেছেন। স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পরও তাঁর অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হতে হয় কি না- সেই সংশয় প্রকাশ করেন কাদের মাস্টার।