এবার মেহেরপুরে জনতার হাতে লাঠি তুলে দিল পুলিশ

জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জন্য মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গার পর এবার মেহেরপুরের পুলিশ সুপার গ্রামের সাধারণ মানুষের সমন্বয়ে গড়ে তুলছেন প্রতিরক্ষা দল। দলের সদস্যরা রাত জেগে পাহারা দিয়ে জনসাধারণের ভয়ভীতি দূর করবে এবং সন্ত্রাসীদের রুখবে।
জেলার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে এ ধরনের একাধিক দল তৈরি করা হচ্ছে। দলের প্রতিটি সদস্যর হাতে একটি করে বাঁশের লাঠি, বাঁশি ও টর্চলাইট তুলে দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার হামিদুল আলম।
আজ বুধবার বিকেলে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বামন্দি ইউনিয়নের দেবীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রতিরক্ষা দল গঠনের লক্ষ্যে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার হামিদুল আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহমারুজ্জামান।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেনের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বামন্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়াল হোসেন, একই ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শহিদুল হক বিশ্বাস, মেহেরপুর জেলা উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি সাংবাদিক রফিকুল আলম, সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, সাংবাদিক মাজেদুল হক মানিক, ফারুক আহমেদ প্রমুখ।
সমাবেশ শেষ ওই ইউনিয়নের দেবীপুর, ঘোড়াঘাট ও চকখল্যাণপুর গ্রামের সাধারণ মানুষদের নিয়ে ১০টি গ্রাম প্রতিরক্ষা দল গঠন করা হয়। প্রতিটি দলে সদস্য সংখ্যা ১০ জন। কমিটি গঠন শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশ সুপার হামিদুল আলম প্রতিরক্ষা দলের সদস্যদের হাতে একটি করে বাঁশের লাঠি, বাঁশি ও টর্চলাইট তুলে দেন। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক, শিক্ষকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে পুলিশ সুপার হামিদুল আলম বলেন, ‘মেহেরপুর জেলায় কোনো সন্ত্রাসীর ঠাঁই হবে না। যেকোনো মূল্যে জেলাকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে হবে। সংখ্যালঘুসহ সাধারণ মানুষকে শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ করে দিতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এভাবে জেলার সব গ্রামে একাধিক প্রতিরক্ষা দল গঠন করা হবে।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহমারুজ্জামান বলেন, ‘মেহেরপুর জেলাকে যেভাবে বাল্যবিবাহ মুক্ত করা হয়েছে এরই ধারাবাহিকতায় জেলাকে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত করা হবে। সাধারণ মানুষ যেন আতঙ্কে না থাকে এর জন্য পুলিশ প্রতিরক্ষা দলকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে।’
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেন বলেন, ‘এই এলাকার সব গ্রামে একাধিক প্রতিরক্ষা কমিটি গঠন করা হবে। পুলিশ ওই সব কমিটির সদস্যদের সহযোগিতা করবে। যেকোনো মূল্যে এলাকাকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে হবে।’
বামন্দি ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, ‘বামন্দি ইউনিয়নে কোনো সন্ত্রাসীর ঠাঁই হবে না। আপনারা যখন যেখানে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমাকে ডাকবেন কাছে পাবেন।’ সন্ত্রাসী প্রতিরোধে গ্রাম প্রতিরক্ষা দলের সদস্যদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নিজের পরিবারকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসন আপনাদের সহযোগিতা করবেন।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে একই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়াল হোসেন বলেন, ‘সন্ত্রাস প্রতিরোধে সব অভিভাবককে সচেতন হতে হবে। প্রতিটি পরিবারের ছেলেমেয়েরা কখন কোথায় কী করছে তার খোঁজ খবর যদি তার বাবা মা নেন তাহলে অনেকাংশেই সন্ত্রাস কমে যাবে।’ গ্রাম প্রতিরক্ষা দল গঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের উদ্যোগ অবশ্যই এলাকায় সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দূর করতে সাহায্য করবে।’
সমাবেশে সাংবাদিক মাজেদুল হক মানিক বলেন, ‘যারা খারাপ মানুষ যারা সন্ত্রাসী যারা দুষ্কৃতিকারী তারা কোনো দলের না, কোনো গোষ্ঠীর না, কোনো সমাজের না। খারাপ মানুষ সবার জন্যই ভয়ানক। তাই এদেরকে প্রতিরোধ করতে সাধারণ মানুষের উচিত পুলিশকে সহযোগিতা করা। পুলিশের একার পক্ষে সব নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব না। সবার সমন্বিত প্রচেষ্ঠায় সব ধরনের অপরাধ রোধ করা সম্ভব।’
ঝিনাইদহসহ সারা দেশে গত দুই বছরে ৪৯ ভিন্ন মতালম্বীকে একই কায়দায় হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে মন্দিরের পুরোহিত, আশ্রমের সেবায়েত, খ্রিস্টান ব্যবসায়ী, শিয়া সদস্য, ব্লগার রয়েছেন।