পূর্ব সুন্দরবনে বনজীবীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার

সুন্দরবনে সম্প্রতি একের পর এক নাশকতামূলক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় দুই মাস বনজীবীদের সব ধরনের পারমিট বন্ধ থাকার পর আজ থেকে আবার পাস চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন বিভাগ।
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, আগুন লাগার পর থেকে বন্ধ থাকা পাস পারমিট আজ রোববার সকাল থেকে চালু করা হচ্ছে। তবে পূর্ব সুন্দরবনের ২৫ নম্বর কম্পার্টমেন্ট (ধানসাগর স্টেশন ও সংলগ্ন অগ্নিকাণ্ডস্থল) এলাকায় নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
সুন্দরবনের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, পূর্ব সুন্দরবনে একের পর এক নাশকতামূলক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বনের পূর্ব বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে প্রবেশের সব ধরনের পাস পারমিট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
‘কিন্তু বনজীবীদের মানবিক বিষয় বিবেচনা করে আজ রোববার থেকে সেই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বন বিভাগের নির্দিষ্ট রাজস্ব দিয়ে পূর্ব সুন্দরবনের বনজীবীরা এখন বনে প্রবেশ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন।’ যোগ করেন জহির উদ্দিন।
এরই মধ্যে পাস চালুর খবর ছড়িয়ে পড়েছে উপকূলের জেলে ও বাওয়ালিদের মধ্যে। দীর্ঘদিন বেকার হয়ে বসে থাকার পর ঈদকে সামনে রেখে আয়ের জন্যই বনজীবীরা এখন বনের যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঈদের আগমুহূর্তে পাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বন বিভাগকে সাধুবাদ জানিয়েছে বনজীবীরা। পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ক্যাম্প ও সংলগ্ন এলাকায় পরপর চারবার আগুন লাগে। এরপর গত ২৯ এপ্রিল থেকে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন সব বনজীবীদের বনে প্রবেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করে বন বিভাগ। এতে বেকার হয়ে পড়ে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে বনের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ১০ লাখ মানুষ।
পাস চালুর দাবিতে দুই মাস ধরে উপকূলের জেলেরা বিভিন্ন এলাকায় মানববন্ধনসহ সভা-সমাবেশ করে আসছিল।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৭ মার্চ পূর্ব সুন্দরবনের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী এলাকায় দুর্বৃত্তরা পরিকল্পিতভাবে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে বনের এক দশমিক ৬৬ একর জায়গার বনভূমি পুড়ে যায়।
এরপর একই এলাকায় দ্বিতীয় দফায় আগুন লাগে ১৩ এপ্রিল। এ আগুনে বনের প্রায় সাড়ে আট একর জায়গার বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বন্য প্রাণীর ক্ষতি হয়। দ্বিতীয় দফার আগুনে সাত লক্ষাধিক টাকার পরিবেশ ও বনজ সম্পদের ক্ষতি হয় বলে দাবি করে বন বিভাগ। বন বিভাগ গঠিত তদন্ত কমিটি আগুন লাগানোর ক্ষেত্রে লোকালয়ের কিছু দুর্বৃত্তদের সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়। আর এর সঙ্গে যোগসাজশ ও কর্তব্যে অবহেলার দায়ে ধানসাগর স্টেশনের এসও (স্টেশন কর্মকর্তা) সুলতান মাহমুদসহ আরো তিন বনপ্রহরী বরখাস্ত হন।
এরপর তৃতীয় দফায় ১৮ এপ্রিল একই এলাকায় আবার আগুন লাগে। এতে বনের আধা একর জায়গার গাছপালা আগুনে পুড়ে যায়।
আর সর্বশেষ ২৭ এপ্রিল ধানসাগর স্টেশনের তুলাতুলী এলাকায় আগুন লাগে। এতেও তিন একরের মতো জায়গার লতা-গুল্ম ও গাছপালা আগুন পুড়ে যায়। এক মাসের মধ্যে সুন্দরবনে চারবার আগুন লাগার ঘটনা দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচিত হওয়ার পর গত ২৯ এপ্রিল থেকে বন বিভাগ অনির্দিষ্টকালের জন্যে পূর্ব সুন্দরবনে সব বনজীবীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।