কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, তিন লাখেরও বেশি মানুষ দুর্ভোগে
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2016/07/25/photo-1469451750.jpg)
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ফুলকুমারসহ সব নদ-নদীর পানি বেড়েই চলেছে। জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে উঁচু এলাকাগুলো।
ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রে পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছে বানভাসি তিন লাখেরও বেশি মানুষ। পানির প্রবল স্রোতে সদরের যাত্রাপুর বাজার রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটার ধসে যাওয়ায় ১৫টি বাড়ি ও ১০টি দোকানঘর নদীতে ভেসে গেছে। যাত্রাপুর বাজার রক্ষা বাঁধের অবশিষ্ট অংশ রক্ষায় দ্রুত সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল গফুরসহ স্থানীয় বাসিন্দারা।
আজ সোমবার দুপুরে উলিপুর উপজেলার নাগরাকুড়া এলাকার তীর রক্ষা বাঁধ ভেঙে নতুন করে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়।
এদিকে সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের কুমরপুর এলাকায় কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী মহাসড়কে পানি ওঠায় ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে চিলমারী শহর রক্ষা বাঁধ।
গত আটদিনে নদ-নদীর অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে জেলার কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী, নাগেশ্বরী, রৌমারী, রাজিবপুর, ফুলবাড়ীসহ ৯ উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫৭ ইউনিয়নের প্রায় তিন লাখেরও বেশি মানুষ। ঘরে খাবার না থাকায় খাদ্য সংকটে পড়েছে বানভাসী মানুষেরা। বিশুদ্ধ পানি ও গবাদি পশুর খাদ্য সংকটে দুর্ভোগ বেড়েছে বন্যার্তদের। সরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা শুরু হলেও তা জুটছে না অনেকের ভাগ্যে। বন্যাকবলিত এলাকায় কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে থাকায় বিছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের কালির আলগা চরের বাসিন্দা আবু তাহের বলেন, ‘টানা বন্যায় ঘরে খাবার না থাকায় বউ-বাচ্চা নিয়ে কোনো রকমে একবেলা খেয়ে দিন পার করছি। গবাদি পশুসহ বাড়ি-ভিটা ছেড়ে আশ্রয় নিতে উঁচু জায়গা খুঁজছি।’
একই চরের নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘ছেলেমেয়েসহ পরিবারের লোকজনকে উঁচু স্থানে পাঠিয়েছি। আমি নৌকা নিয়ে বাড়ি পাহারা দিচ্ছি। ত্রাণ সহায়তা এখনো পাই নাই। নিজেদের এবং গরু, ছাগল, মুরগির খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় খুব কষ্টে আছি।’
কুড়িগ্রামে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আকতার হোসেন আজাদ বলেন, আট লাখ ৭৫ হাজার টাকা ও ১৯২ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে যা বিতরণে কাজ চলছে। নতুন করে ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
দুর্গম চরাঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করেন। তাঁরা জানান, জেলা প্রশাসন থেকে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
কুড়িগ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃদ্ধি পেয়েছে তিস্তা ও দুধকুমারের পানিও।’