রায়পুরায় সেতুর উচ্চতা বাড়ানোর দাবিতে মানববন্ধন

নরসিংদীর রায়পুরায় নির্মাণাধীন সেতুর উচ্চতা বাড়ানোর দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। পৌর শহরের মূল প্রবেশপথে প্রায় শত বছরের পুরোনো সেতুটি ভেঙে নতুনভাবে নির্মাণকাজ চলছে।
বৃহস্পতিবার বেরা ১১টায় নির্মাণাধীন সেতুর ওপর রায়পুরা সামাজিক আন্দোলন কমিটি এই মানববন্ধন করে।
আন্দোলনকারীদের দাবি, নির্মাণাধীন সেতুর উচ্চতা কম হওয়ায় রায়পুরা উপজেলার সঙ্গে ছয়টি ইউনিয়নের নৌ-যোগাযোগব্যবস্থা চরমভাবে ব্যাহত হবে। এ ছাড়া নৌ-যোগাযোগ নির্ভর সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য ও মালামাল পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। যার ফলে ধ্বংস হয়ে যাবে প্রায় ২০০ বছরেরও পুরোনো শ্রীরামপুর বাজারে ব্যবসা-বাণিজ্য। এই আশঙ্কায় সেতুর উচ্চতা বৃদ্ধি করার জন্য সেতু বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের কাছে বারবার যোগাযোগ করছেন রায়পুরার সচেতন ব্যক্তিরা।
রায়পুরাবাসীর অভিযোগ, উপজেলার মূল শহরে স্থলপথে প্রবেশের একমাত্র পথ হলো মেঘনা নদীর শাখা কাকন নদীর ওপর নির্মিত এ সেতুটি। সেতু বিভাগের সচিব ও সওজের প্রধান প্রকৌশলীর হস্তক্ষেপে পুরোনো সেতু ভেঙে প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এখানে নতুন একটি সেতু নির্মাণ করছে নরসিংদী সড়ক ও সেতু বিভাগ। যথাসময়ে সেতুটির নির্মাণকাজও শুরু হয়। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নানা দুর্নীতির মাধ্যমে সেতুর পিলারের কাজ শেষ করে। এরপরই এলাকাবাসীর নজরে আসে অবাক করা দৃশ্য। পানির উচ্চতা ও সেতুর গার্ডারের উচ্চতা সমান হওয়ায় এ মৌসুমে ব্যবসায়ীরা মালামাল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। যার কারণে এই সেতুটির নিচ দিয়ে চলাচল করতে পারছে না সাধারণ নৌকাও। যে উপজেলায় সেতু বিভাগের সচিব ও সওজের প্রধান প্রকৌশলীর গ্রামের বাড়ি, সেখানে এ ধরনের ভুল সিদ্ধান্তে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সেতুটি নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারেরও অভিযোগ আনা হয়েছে।
লোকজন জানান, রায়পুরা উপজেলার প্রধান বাজার হচ্ছে শ্রীরামপুর বাজার। এই বাজারকে ঘিরেই রায়পুরার মানুষ তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। শ্রীরামপুর বাজারে বাহাড়চর থেকে নৌকাবোঝাই করে পাট নিয়ে আসা বাহাড়চর এলাকার ফজলু মিয়া বলেন, ‘আমরা হাট-বাজার সব এই শ্রীরামপুর বাজারে করি। নৌকা দিয়ে পাট, ধান নিয়ে এসে এই বাজারে বিক্রি করি। সেতু যে নিচা কইরা বানাইতাছে এখন মনে হয় বর্ষাকালে আর বাজারে নৌকা নিয়ে আসা যাবে না। বেশ অসুবিধায় পইড়া যামু আমরা।’
একই সুরে শ্রীরামপুর বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাদল কুমার সাহা বলেন, সরকার বাজারে আসা পণ্য ও নৌকার যাত্রীদের জন্য ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে বিশাল ঘাট নির্মাণ করেছে। সেই ঘাট কোনো কাজে আসবে না। মূলত বর্ষাকালেই চরাঞ্চলের মানুষ তাঁদের পাট, ধান, বিভিন্ন জাতের ফসল বিক্রি করতে বাজারে আসেন। কিন্তু এই উচ্চতায় সেতু নির্মিত হলে তাঁরা আর নৌকা নিয়ে বাজারে আসতে পারবেন না। রায়পুরাবাসীর পক্ষে সরকারের কাছে দাবি, সেতুর উচ্চতা যেন আরো বৃদ্ধি করা হয়।
এ ব্যাপারে সড়ক ও সেতু বিভাগের নরসিংদী জেলার প্রধান প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘সেতুটির উচ্চতার কারণে নৌকা চলাচল করতে পারবে না তা ঠিক নয়। সেতুটির দুই পাশ দিয়ে নৌকা চলাচলের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শীত বর্ষা কোনো সময়ই নৌকা চলাচলে কোনো অসুবিধা হবে না। যারা এর বিরোধিতা করছে তারা না বুঝেই তা করছে।’