ফারুক হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠাতে চিঠি

টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর জন্য টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসককে (ডিসি) চিঠি দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি)।
ফারুক হত্যা মামলার প্রধান আসামি ঘাটাইল-৩ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাংসদ আমানুর রহমান খান রানা। এ মামলায় তাঁর অপর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা ও ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকনসহ ১৪ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।
টাঙ্গাইল পুলিশ সুপার কার্যালয় জানিয়েছে, জেলার সবচেয়ে আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর এ মামলার আসামিদের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর ব্যবস্থা নিতে ৮ আগস্ট পুলিশ সুপার একটি চিঠি জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ নিহত হওয়ার পর জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়। পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী শোকসন্তপ্ত পরিবারকে তাঁর কার্যালয়ে ডেকে সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং জনমনে সুশাসনের প্রতি আস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মামলাটি দ্রুততম সময়ে বিচার সমাপ্ত করার জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর প্রয়োজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেন শুক্রবার বলেন, পুলিশ সুপারের দেওয়া চিঠিটি তিনি পেয়েছেন। মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর বিষয়টি এখন প্রক্রিয়াধীন আছে।
সাংসদ আমানুর রহমান রানা, তাঁর তিন ভাই ও অপর ছয় আসামিকে পলাতক দেখিয়ে ফারুক হত্যা মামলার বিচারকাজ দ্রুত শুরু হচ্ছে। মামলাটি বিচারিক হাকিম আদালত থেকে বিচারকাজ নিষ্পত্তির জন্য ৮ আগস্ট জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়।
টাঙ্গাইলের আদালত পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার পলাতক আসামিদের ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য দুটি দৈনিক পত্রিকায় গত ৩০ জুন বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। হাজির না হলে তাঁদের অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ সম্পন্ন করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। ওই ৩০ দিনের মধ্যে আমানুর রহমান খান রানাসহ পলাতক ১০ আসামির কেউ আদালতে হাজির হননি। মামলার ধার্য তারিখে টাঙ্গাইল সদর আমলি আদালতের বিচারক হাকিম আবদুল্লাহ আল মাসুম মামলাটির পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য মুখ্য বিচারিক হাকিমের কাছে পাঠিয়ে দেন। মুখ্য বিচারিক হাকিম ওই দিনই মামলাটির বিচার ও নিষ্পত্তির জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠান। জেলা ও দায়রা জজ বিচারের জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে মামলাটি পাঠিয়েছেন। ২৪ আগস্ট মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে।
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তাঁর কলেজপাড়া এলাকার বাসার সামনে থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর নিহত ফারুক আহমেদের স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি মামলা করেন। মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি)।২০১৪ সালের আগস্টে এই মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামের দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যাপারে তথ্য দেন।
এর পর থেকে সাংসদ রানা ও তাঁর তিন ভাই আত্মগোপনে চলে যান। এ বছর ৩ ফেব্রুয়ারি রানা ও তিন ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত ২০ মে রানা, তাঁর তিন ভাইসহ সব আসামির অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা হয়।