মোংলা বন্দরে লাইটার সংকট, পণ্য খালাস ব্যাহত

লাইটার জাহাজ সংকটের কারণে মোংলা বন্দরে আগত বিভিন্ন পণ্যবাহী জাহাজের মালামাল খালাস বিলম্বিত হচ্ছে। লাইটার জাহাজের অভাবে আজ মঙ্গলবার বন্দরে অবস্থানরত ক্লিংকার, সার, পাথর, কয়লা ও খাদ্যশস্যসহ ১৩টি জাহাজের মধ্যে বেশ কয়েকটি জাহাজে পণ্য খালাসের কাজ পুরোপুরি বন্ধ ছিল।
এদিকে এ সংকটে পড়ে বন্দরে অবস্থানরত বেশির ভাগ জাহাজে পণ্য খালাসের কাজ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন আমদানিকারক, পণ্য খালাসকারী প্রতিষ্ঠানসহ বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন মহল। এ কারণে সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে মোংলা বন্দরের। পর্যাপ্ত লাইটার না থাকায় পণ্য খালাস করতে না পেরে দীর্ঘদিন ধরে জাহাজগুলো এ বন্দরে অলস অবস্থায় পড়ে থাকছে। এতে বন্দর ব্যবহারকারীরা মোংলা বন্দর ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এ ছাড়া অনেক জাহাজমালিক তাদের জাহাজ এ বন্দরে পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে মংলা বন্দরে জাহাজ সংকটের কারণে মন্দাভাব বিরাজ করায় এ অঞ্চলের বেশির ভাগ বার্জ, কার্গো ও কোস্টার মালিক তাদের নৌযান বিক্রি করে দিয়েছে অথবা অন্য রুটে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত করেছে। এ কারণে বর্তমানে এ অঞ্চলের মালিকদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নৌযান নেই। এরপরও মাঝেমধ্যে স্বল্প সংখ্যক বার্জ-কার্গো-কোস্টার জাহাজে পণ্য পরিবহনের জন্য পাওয়া গেলেও অধিক ভাড়া এবং অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়ার আশায় সেগুলো ভারত থেকে আমদানি করা সিমেন্ট, ক্লিংকারসহ অন্যান্য পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত। ফলে মংলা বন্দরে লাইটারেজ জাহাজ সংকট লেগেই আছে।
মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী ও ষ্টিভিডরস মেসার্স নুরু এন্ড সন্স এর মালিক এইচ এম দুলাল এবং ইউনিক মেরিটাইমের লিঃ এর পরিচালক শেখ বদিউজ্জামান টিটু বলেন, ‘লাইটার সংকটের কারণে মোংলা বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য খালাসে বিলম্ব ঘটছে। একেকটি জাহাজ এ বন্দরে দিনের পর দিন অলস পড়ে থাকছে। এতে বর্হিবিশ্বের কাছে মংলা বন্দরের সুনাম যেমন ক্ষুণ্ণ হচ্ছে তেমনি এ বন্দরে জাহাজ মালিকরা তাদের জাহাজ পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। পণ্যবাহী বিদেশি জাহাজ এ বন্দরে অলস পড়ে থাকায় প্রতিদিন এক একটি জাহাজকে প্রায় ২০ হাজার মার্কিন ডলার লোকসান গুনতে হচ্ছে। ফলে বিদেশি জাহাজ মালিকেরা এ বন্দরে জাহাজ পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করে থাকে। এ ছাড়া পণ্য খালাস কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যখনই পণ্য খালাসের জন্য কোনো লাইটার জাহাজের পাশে ভিড়ে থাকে তখন তাকে দ্রুত পণ্য খালাসের জন্য লোকবল পাঠাতে হয়। আবার যখন লাইটার না থাকে তখন ওই লোকজনকে জাহাজে অলস বসিয়ে রেখে অতিরিক্ত শ্রম মজুরি দিতে হয়। এসব কারণে পণ্য খালাস কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো এ বন্দরে পণ্য বোঝাই খালাস কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। অপরদিকে লাইটারের অভাবে আমদাণি পণ্য সময় মতো খালাস করে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছাতে না পারায় পণ্যের বাজারজাত ও দাম বেড়ে যাচ্ছে বহুলাংশে। যার প্রভাব পড়ছে দেশের উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নৌযান মালিক জানান, লাইটার সংকট নিরসনে কোনো কোনো আমদানিকারক ও বন্দর ব্যবহারকারী নিজ উদ্যোগে নৌযান নির্মাণ করতে চাইলেও নানা জটিলতায় নতুন করে লাইটার নির্মাণের অনুমোদন পাওয়া যাচ্ছে না। এতে এ সমস্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। অভিযোগ উঠেছে, কতিপয় নৌযান মালিক সিন্ডিকেট করে নতুন লাইটার জাহাজ নির্মাণের অনুমতি না দেওয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে নানাভাবে ম্যানেজ করে রেখেছে। এসব অসাধু নৌযান মালিক মংলা বন্দরে লাইটার সরবরাহের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও অধিক হারে ভাড়া আদায় করে আসছে। তাদের চাহিদা অনুযায়ী অতিরিক্ত ভাড়া না দিলে তারা নৌযান সরবরাহ না করে পণ্য খালাস কাজ ব্যাহত করছে।
আমদানিকারক মেসার্স শেখ ব্রাদার্সের মালিক শেখ রফিকুল ইসলাম জানান, বর্তমানে এ বন্দরে তাঁর গম ও সারবাহী দুটি জাহাজ আছে। লাইটার সংকটের কারণে সময়মত পণ্য খালাস করতে না পারায় তাঁকে মোটা অঙ্কের টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। এর আগে আরো তিনটি জাহাজে একই কারণে ব্যাপক লোকসান হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘ধারাবাহিক এ লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে নিজস্ব লাইটার জাহাজ নির্মাণ করার ইচ্ছা থাকলেও নানা জটিলতার কারণে তাও পারছি না, যার কারণে আমি আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাধ্য হয়ে আমরা এ বন্দর আর ব্যবহার করব না।’
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে লাইটার সংকটের কারণে পণ্য খালাস কাজ ব্যাহত হচ্ছে। যেহেতু এ বন্দরে আমদানি ও রপ্তানি আগের চেয়ে বেড়েছে সেক্ষেত্রে নতুন করে লাইটার নির্মাণের অনুমতি থাকা প্রয়োজন। আগ্রহী আমদানিকারক কিংবা ব্যবসায়ীদের নতুন লাইটার নির্মাণের সুযোগ দেওয়া হলে এ সংকট কেটে যাবে।