কেশবপুরে ১১ হাজার পরিবার পানিবন্দি

যশোরের কেশবপুর উপজেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। উপজেলায় প্রায় ১১ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।
গতকাল বুধবার দিনভর বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় প্লাবিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। সড়কের পাশে এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেওয়া মানুষের মধ্যে খাবারের সংকট রয়েছে। কারণ বৃষ্টির কারণে তারা রান্না করেও খেতে পারছে না।
এ ছাড়া প্লাবিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাবে শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্যকর্মকর্তা শেখ আবু শাহিন জানান, বন্যা প্লাবিত এলাকায় চারটি মেডিকেল টিম কাজ করছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খাওয়ার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, চুলকানি, পাঁচড়া রোধে ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ১২ জন। কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছে তিনজন ও ৯ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। যার মধ্যে মধ্যকুল মেডিকেল ক্যাম্পে পাঁচজন, আলতাপোল ক্যাম্পে দুজন, পাইলট বালিকা বিদ্যালয় ক্যাম্পে একজন, পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজে ক্যাম্পে একজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।
সরকারিভাবে যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে সেটা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন স্থানে নানাভাবে নাজেহাল হচ্ছেন। পানির চাপে কাঁচা ঘরবাড়ি ধ্বসে পড়ে বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে মানুষ।
উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা বিপুল মালাকার সাংবাদিকদের জানান, বন্যার পানিতে দুই হাজার ৩৬১টি কাঁচা, আধাপাকা ও পাকা বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ৪০০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ২৪ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
গত ৯ আগস্ট থেকে অবিরাম বর্ষণে কেশবপুর পৌরসভাসহ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ১১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নসহ কেশবপুর পৌরসভা এলাকার ১১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রতিদিনই প্লাবিত এলাকায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের দুই পাশে টংঘর, কেশবপুর পাইলট বালিকা বিদ্যালয় ,কেশবপুর পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও আলতাপোল ব্রিজের ওপর দেড় হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। মৎস্যঘের, সবজিক্ষেত , অবকাঠামো, ধানের আবাদ মিলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০০ কোটি ৩৬ লাখ ১১ হাজার টাকা।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, অবিরাম বর্ষণে উপজেলার দুই হাজার ১৫টি মাছের ঘের, দেড় হাজার পুকুর প্লাবিত হয়েছে। এতে অবকাঠামোসহ ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮১ কোটি ৬৫ লাখ ৬০ হাজার ৭০৯ টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার দাস জানান, অবিরাম বর্ষণে তিন হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমির আউশ, আমন, সবজি আবাদ বিনষ্ট হয়েছে। যার ক্ষতির পরিমাণ ২৮ কোটি ৬০ লাখ ৬০ হাজার ৭০০ টাকা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানানো হয়েছে যে, ২২টি গরুর খামার ও ৩২টি পোলট্রি ফার্ম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মিরাজুল আশরেকীন জানান, অবিরাম বর্ষণে উপজেলার ৬১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হক জানান, উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজ মিলে ৪০টি প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে।
উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তর জানায়, বন্যায় যশোর-সাতক্ষীরা সড়কসহ ১৭টি সড়কে পানি উঠে গেছে। এ ছাড়া মাছের ঘেরের পাশের ৩৮টি গ্রামীণ সড়ক ইটের সোলিং ও কাঁচা রাস্তা ভেঙে পড়েছে।
কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম মোড়ল জানান, উপজেলার মধ্যে কেশবপুর পৌর এলাকা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পৌর এলাকার পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর পরিস্থিতির শিকার হয়ে পড়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফ রায়হান কবীর সাংবাদিকদের জানান, বন্যার্ত মানুষের জন্য পলিথিন সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিকে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। তারাও এগিয়ে আসবে দ্রুত।