৪ বন্ধুর তিনজনই পড়তেন বেসরকারি ইউনিভার্সিটিতে

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চার বন্ধুর তিনজনই বেসরকারি ইউনিভার্সিটিতে পড়তেন। আর একজন সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিন বন্ধু ছিলেন পরস্পরের আত্মীয়।
চারটি তরতাজা প্রাণ নিমিষেই চিরতরে চলে যাওয়ায় পরিবারগুলোতে এখনো চলছে মাতম। কাঁদছেন স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরাও।
গত বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার পুরিন্দা এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে একটি শিশু দৌড়ে সড়ক পার হচ্ছিল। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে চার বন্ধুকে বহনকারী প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই এক বন্ধু নিহত হন। গুরুতর আহত হন তিনজন বন্ধু। আশপাশের লোকজন তাঁদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ওই দুর্ঘটনায় নিহত হন নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সহসভাপতি ও মাধবদী উপজেলার ভগীরথপুর এলাকার আবদুল মোমেন মোল্লার ছেলে আশিকুর রহমান পাভেল (২০), তাঁর মামাতো ভাই একই এলাকার আবদুর রশিদ মোল্লার ছেলে আফ্রান আহমেদ লিমন (২০), ফুফাতো ভাই একই এলাকার মাসুম চৌধুরীর ছেলে তাসকিন আহমেদ অভি (১৯) এবং তাঁদের বন্ধু মাধবদীর বিরামপুরের আবদুল বাতেনের ছেলে শরিফুল ইসলাম তুষার (১৯)।
এদের মধ্যে পাভেল ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ, লিমন বিজেএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এবং তুষার ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির বিবিএর ছাত্র ছিলেন। অভি কিছুদিন আগে ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।
এ দুর্ঘটনার খবরে ভেঙে পড়েছে নিহতদের স্বজন, সতীর্থসহ মাধবদীর সর্বস্তরের মানুষ। নিহত পাভেল ছিলেন মাধবদীর এম এম কে সিএনজি স্টেশন ও এম এম কে ডাইংয়ের মালিক হাজি আবদুল মোমেন মোল্লার একমাত্র ছেলে। মোমেন মোল্লার চার মেয়ে রয়েছে।
পাভেলের মৃত্যুর পর স্বজনদের পাশাপাশি ঘনিষ্টজনরা মোমেন মোল্লাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলেও কোনো কথাতেই ছেলের শোক ভুলতে পারছেন না তিনি। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, পাভেল বিবিএ শেষ বর্ষে পড়াশোনা করছিল। ইচ্ছে ছিল দেশের বাইরের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করে দেশে ফিরে ব্যবসা করবে। সে সবসময় এলাকার সামাজিক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখত। কিন্তু ছেলের সব স্বপ্ন আজ হারিয়ে গেল।
পাভেলদের পাশেই লিমন ও অভিদের বাড়ি। সেই বাড়ি থেকেও ভেসে আসছিল স্বজনদের আহাজারি। কাঁদতে কাঁদতে অভির মা বলেন, ‘আমার বাবা কেমনে গেলগা। আমার কাছ থেকে কেমন শেষ বিদায় নিয়া গেল আমি কিছুই বুঝতে পারি নাই। বুঝতে পারলে বাবাকে আমি বাড়ি থেকে বের হতে দিতাম না। এখন আমি কাকে অভি ডাকব?’
নিহত লিমনের মামা দস্তগীর আলম বলেন, তারা চার বন্ধু খুবই মেধাবী। সবদিক থেকেই অসাধারণ ছিলেন। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! ফুল না ফুটতে অকালে ঝরে গেল জীবন্ত তাজা চার চারটি গোলাপ।
গত বুধবার রাতে মাধবদীর বিরামপুরে শরিফুল ইসলাম তুষারের ও গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ভগীরথপুর হাজি লাল মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পাভেল, লিমন ও অভির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নিতে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়। পুরো মাঠ কাণায় কাণায় ভরে যায়।
নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন আড়াইহাজারের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, নরসিংদীর সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন, মাধবদী পৌরসভার মেয়র মোশারফ হোসেন মানিক, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফর আলী ভূঞা, নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন, পরিচালক আলী হোসেন শিশির, মনিরুজ্জামান ভূঞাসহ বিশিষ্ঠ ব্যক্তিরা।