খুলনায় তিন ভবনে ছয় স্কুল, পাঠদান ব্যাহত

ভবন একটি; কিন্তু সেখানে শিক্ষাদান কার্যক্রম চলছে দুটি স্কুলের। এভাবে খুলনা শহরের ছয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে তিনটি ভবনে। চলছে বছরের পর বছর। কবে নাগাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো নিজস্ব ঠিকানায় যাবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফলে সরকারের যে এলাকাভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষা র্কাযক্রম রয়েছে, তা ব্যাহত হচ্ছে।
খুলনা নিউমার্কেটের পেছনে সোনাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় ১৮৭০ সালে। ১১৮ বছর পর ১৯৮৮ সালে দোতলা এবং পরে তৃতীয় ভবন নির্মিত হয়। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে মেরামতের জন্য ৩৩ লাখ টাকার কাজও হয়। কিন্তু এরই মধ্যে সেই ভবন পরিত্যক্ত করতে বাধ্য হয়েছে শিক্ষা অফিস।
বিদ্যালয় ভবনটি ব্যবহার উপযোগী না থাকায় এক কিলোমিটার দূরে সোনাডাঙ্গা আবুবকর খান আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বর্তমান আবুবকর খান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন এই একতলা ভবনের চারটি কক্ষে দুই পালায় দুটি স্কুল চলছে। কক্ষ-স্বল্পতার কারণে এই কক্ষে একই সময় বিপরীতমুখী হয়ে দুই শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম চলে।
সোনাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সন্ধ্যা রানী ঘোষ জানান, তাঁদের ভবনে স্কুল থাকার সময় স্কুলে যে ছাত্রছাত্রী ছিল, বর্তমানে সে ছাত্রছাত্রী নেই। অনেক দূর আর সময় পরিবর্তনের কারণে অনেকে অন্য স্কুলে চলে গেছে। হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, কবে নাগাদ তারা নিজস্ব ভবনে যেতে পারবে, তারও কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। তিনি বলেন, ঠিকাদার ঠিকমতো কাজ করলে ভবনের এ অবস্থা হতো না। নির্মাণের ২৮ বছরের মধ্যে কোনো ভবন ব্যবহার অনুপযোগী হওয়া ঘটনার খুবই বিরল। তার পর আবার ৩৩ লাখ টাকার সংস্কারের কাজও হয়েছে। অথচ কেউ ঠিকাদার বা প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।
স্কুলের শিক্ষিকা পাপিয়া খাতুন বিদ্যালয়ের ছাদ ধসে পড়ার ঘটনার কথা বলেন। তিনি বলেন, সামান্যর জন্য সেদিন কয়েকজন ছাত্র রক্ষা পেয়েছিল। যেহেতু তাদের ছাত্রছাত্রী শিশু, তাই তারা অনেক সময় স্কুল ভুল করে ফেলে। তিনি জানান, শিক্ষকদের জন্য কোনো কক্ষ নেই।
আবুবকর খান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইউসুপ আলী হাওলাদার বলেন, তাঁদের যে কক্ষ ছিল, তা তাঁদেরই স্থান সংকুলন হতো না। এখন আবার নতুন করে সোনাডাঙ্গা স্কুল যোগ হওয়ায় বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নিজের অফিস দেখিয়ে বলেন, অতিথি বা কারো কোনো বসার স্থান নেই। বলেন, এক স্কুলের বাথরুম, দুই স্কুলের ছাত্রছাত্রী শিক্ষকরা ব্যবহার করছে, ফলে বিড়ম্বনার কোনো শেষ নেই।
খুলনার ডালমলি মোড়ে ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন পরিত্যক্ত হলে ইসলামাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয় পাঁচ বছর আগে। এই সময়ে ইসলামাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই কক্ষে চলছে অপর বিদ্যালয়ের পাঠদান।
ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহানা আক্তার বলেন, পাঁচ বছর ধরে অন্য স্কুল ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। দুই পালায় দুটি স্কুল চললেও তাঁরা মাত্র দুই কক্ষ ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছেন। ফলে একই কক্ষে হার্ডবোর্ডের পার্টিশন দিয়ে তাঁদের ক্লাস করতে হয়। শ্রেণিকক্ষের মধ্যেই তাঁদের অফিস। সব মিলে একটা জগাখিচুড়ি অবস্থা বিরাজ করছে। তিনি জানান, নিজস্ব স্কুলভবনে তাঁদের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ১৭০/১৭৫ জন। বর্তমানে তা কমে এসেছে ৮০/৮৫ জনে। তাদের মধ্যে আবার সবাই নিয়মিত স্কুলে আসে না দূরত্বের কারণে।
ইসলামাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিনিদা ইয়াসমিন জানান, তাঁদের যে ছাত্রছাত্রী, তাদেরই কক্ষ সংকট রয়েছে। সেখানে আবার দুটি কক্ষ ছেড়ে দিতে হয়েছে অন্য স্কুলকে। ছোট শিশুদের নিয়ে সমস্যার কোনো শেষ নেই। প্রায় ভুল করে এক স্কুলের ছাত্র অন্য স্কুলে ঢুকে পড়ে।
খুলনা সদর থানা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রীনা পারভিন ঘটনা স্বীকার করে বলেন, খুলনা মহানগরীতে বর্তমানে ছয়টি স্কুল চলছে তিনটি স্কুল ভবনে। কবে নাগাদ এই স্কুলগুলো আবার নিজেদের ভবনে ফিরে যেতে পারবে, সে ব্যাপারে কিছু বলতে পারেননি।