ছেলেকে শাসন করায় স্কুলশিক্ষককে মারধর, সংঘর্ষ

গাজীপুরের পুবাইলে এক স্কুলছাত্রকে শাসন করায় শিক্ষককে মারধর করেছে তার বাবা। শিক্ষককে মারধরের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আজ মঙ্গলবার সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ ও যানবাহন ভাঙচুর করে। এ সময় পুলিশ লাঠিপেটা করলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এতে দুই পুলিশ সদসসহ অন্তত ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়।
এ ঘটনায় পরিস্থিতি সামাল দিতে মঙ্গলবার থেকে বিদ্যালয়ে দুই দিন ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। আর শিক্ষককে মারধরের অভিযোগে পুলিশ এক শিক্ষার্থীর বাবা পলাশ পিরিচকে (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে।
হারবাইদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মারফত আলী দেওয়ান ও স্থানীয় লোকজন জানায়, পরীক্ষার ফলাফল খারাপ করায় এবং শ্রেণিকক্ষে দুষ্টামি করায় সোমবার সকালে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র পলফ ড্যানিয়েল পিরিচকে শাসন করেন ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আবু বকর সিদ্দিক। ক্লাসের পর বিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে পলফ ঘটনাটি তার বাবা পলাশ পিরিচকে (৪৫) জানায়। পরে ছাত্রের বাবা পলাশ ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষকের কাছে নালিশ দেন। বিষয়টি সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দিলে পলাশ চলে যান। পথে ওই শিক্ষকের সঙ্গে দেখা হয় পলাশের। এ সময় তিনি ওই শিক্ষকের পথরোধ করেন এবং ছেলেকে কেন মেরেছেন তার কৈফিয়ত চান। এ নিয়ে তাঁদের দুজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে পলাশ ওই শিক্ষকের নাকে মুখে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। এতে শিক্ষকের নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ঝরতে শুরু করে। খবর পেয়ে সহকর্মী ও ছাত্ররা এগিয়ে গেলে দ্রুত এলাকা ত্যাগ করেন পলাশ। পরে শিক্ষক আবু বকরকে উদ্ধার করে প্রথমে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে ঢাকার একটি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে আজ সকালে জয়দেবপুর থানায় প্রধান শিক্ষক থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
এদিকে, শিক্ষককে মারধরের প্রতিবাদে আজ সকালে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও সমাবেশ শুরু করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা টঙ্গী-ঘোড়াশাল সড়ক অবরোধ করে এবং কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। সড়ক অবরোধের কারণে সড়কের উভয় দিকে যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধকারীদের সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় পুবাইল ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মোবারক হোসেনসহ দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিপেটা করলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে অন্তত আট শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ শিক্ষকের ওপর হামলাকারী অভিভাবক পলাশকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় পরিস্থিতি সামাল দিতে মঙ্গলবার থেকে স্কুলটির সব ক্লাস দুদিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার মো. রেজাউল হাসান রেজা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, অভিযুক্ত অভিভাবক পলাশ পিরিচকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।