সরকারিভাবে নিম্নমানের চাল সংগ্রহের অভিযোগ

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার খাদ্যগুদামে (এলএসডি) সরকারিভাবে চাল সংগ্রহ অভিযানে নিম্নমানের চাল কেনার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া ধান সংগ্রহ অভিযানে কেনা ধানের বিপরীতে চাল মজুদ না করে তার স্থলে পুরোনো চাল গুদামে মজুদ করার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও কমিটি এখনো পর্যন্ত কাজ শুরু করেনি। আর এই সুযোগে সান্তাহার খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন খান নিম্নমানের চাল সরিয়ে ভালোমানের চাল গুদামজাত করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সঠিক সময়ে তদন্ত করা না হলে চলতি মৌসুমে সংগৃহীত নিম্নমানের চাল গুদামে থাকলে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসানের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৬ আগস্ট খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. ফয়েজ আহম্মেদ এবং পরিচালক মো. জাকির হোসেন সান্তাহার খাদ্যগুদাম পরিদর্শন করেন। এ সময় রাজশাহীর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ড. এস এম মুহসিন, বগুড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জামাল হোসেন, আদমদীঘির উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেকেন্দার রবিউল ইসলামসহ খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শনের সময় খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফয়েজ আহম্মেদ গুদামে মজুদ করা খাদ্যশস্যের মান যাচাই করেন। যাচাইকালে সদ্য সংগৃহীত বোরো-১৬ চাল এবং সংগৃহীত বোরো-১৬ ধান থেকে ফলিত চালের মান সম্পর্কে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এরপর কারিগরি কমিটি দিয়ে এবারের সংগৃহীত চালসহ মজুদ খাদ্যশস্যের মান যাচাই করে খাদ্য অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য তাৎক্ষণিক মৌখিক নির্দেশনা দেন।
এ নির্দেশনার পর রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ড. এস এম মুহসিন তদন্ত কমিটি করেন। কিন্তু ঘটনার পর আটদিন পার হয়ে গেলেও তিনি কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেননি। অবশেষে খাদ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অসন্তোষের কারণে গত ২৪ আগস্ট বিকেলে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন তিনি।
সাত কর্মদিবসের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক দপ্তরের সহকারী রসায়নবিদ মো. মমিনুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্য সচিব নওগাঁ সদর উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. রেজাউল ইসলাম এবং সদস্য করা হয়েছে বগুড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক শেখ নুর মোহাম্মদকে।
কিন্তু তদন্ত কমিটি গঠন করার পর তিনদিন পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কমিটি কাজ শুরু না করায় সুষ্ঠু তদন্ত নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে কমিটির আহ্বায়ক মো. মুমিনুল ইসলাম ও সদস্য সচিব মো. রেজাউল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা বলেন, ‘আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিসের চিঠি আমরা পেয়েছি। আগামী ১ সেপ্টেম্বর তারিখের দিকে তদন্ত কমিটি সান্তাহার খাদ্যগুদামে গিয়ে তদন্ত শুরু করবে।’ তদন্তে চাল কেনা এবং ধান থেকে ফলিত চালের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম বা নিম্নমানের চাল বলে প্রমাণ পাওয়া গেলে সান্তাহার খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তারা।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাদ্য অধিদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গত ১৬ আগস্ট খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ঢাকা থেকে টিম পাঠিয়ে তদন্ত করার মতামত দিলে রাজশাহীর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক তড়িঘড়ি করে আবুল হোসেন খানকে বাঁচানোর জন্য নিজেই তদন্ত টিম গঠনের দায়িত্ব নেন। আর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কমিটি গঠন নিয়ে গড়িমসি শুরু করেন। পরবর্তীতে ২৪ আগস্ট খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেলে ওই দিন বিকেলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাপে তিনি তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
এ ব্যাপারে রাজশাহীর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ড. এস এম মুহসিনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি। তবে বগুড়ার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জামাল হোসেন জানান, সান্তাহার এলএসডির চাল একটু লালচে হওয়ায় ডিজি এবং তাঁর সঙ্গে আসা টিমের সন্দেহ সৃষ্টি হয়। এ কারণে এরই মধ্যে চালের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
সরকারিভাবে কেনা চাল নিম্নমানের কি না এবং ফলিত চালের মধ্যে নিম্নমানের কোনো চাল আছে কি না, তা বিশদভাবে যাচাই করার জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি যখন কাজ শুরু করবে তার সাত কর্মদিবসের মধ্যে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিসে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।
এ ব্যাপারে খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জাকির হোসেন জানান, সান্তাহার এলএসডির চালের মান দেখে মহাপরিচালক অসন্তোষ প্রকাশ করেন। আর এ কারণে তিনি ঢাকা থেকে তদন্ত টিম পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা বললে রাজশাহীর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ড. এস এম মুহসিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের কথা বলেন।
মো. জাকির হোসেন জানান, লালচে রঙের চাল দেখে এই মৌসুমের চাল বলে মনে হয়নি। এখন তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এ ধরনের নিম্নমানের চাল সরকারিভাবে কেনা হলে সরকার কোটি কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়বে।
এদিকে নিম্নমানের চাল কেনা প্রসঙ্গে সান্তাহার এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন খানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, বোরো মৌসুমে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৭৪০ মেট্রিক টন। সরকারিভাবে ধান কেনার পর ১৩টি মিল থেকে সংগ্রহ করে ফলিত চাল গুদামে সংরক্ষণ করা আছে। আর বোরো মৌসুমে এক হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যার মধ্যে এ পর্যন্ত এক হাজার ৪০০ মেট্রিক চন চাল কেনা হয়েছে। ধান এবং চাল কেনার ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ধান এবং চাল কেনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম বা নিম্নমানের চাল কেনা হয়নি।