শরীয়তপুরে পদ্মার ভাঙনে দুই দিনে ১৫০ পরিবার গৃহহীন

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কুণ্ডেরচর ইউনিয়নের কলমিরচর গ্রামে পদ্মার ভাঙনে শতাধিক ঘরবাড়ি, মসজিদ, গাছপালা বিলীন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে আজ শনিবার দুপুর পর্যন্ত এই ঘটনা ঘটে।
ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের নিরাপদ স্থানে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। এ নিয়ে গত ২২ দিনে গ্রামটির ৬০০ পাঁচটি পরিবার গৃহহীন হয়েছে।
হঠাৎ পদ্মা নদীতে প্রবল স্রোত দেখা দেওয়ায় ব্যাপক ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া চলতি মাসের ৬ তারিখ থেকে কলমিরচর গ্রামে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়। গত ১৩ আগস্ট ভাঙনে কলমিরচর বাজারটি বিলীন হওয়ায় ২৫০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত বৃহস্পতিবার সকালে কলমিরচর গ্রামে আকস্মিক ভাঙন শুরু হয়। বেলা ১১টার দিকে একটি মসজিদসহ একটি পাকা রাস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়। এরপর সন্ধ্যা পর্যন্ত শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। গ্রামটিতে ৮৫০ পরিবার বসবাস করত।
শনিবার সকালে কলমিরচর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভাঙনকবলিত মানুষ অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করেছে। গ্রামের আরো ২০০ পরিবার মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভাঙনের হুমকিতে আছে। ভাঙন আতঙ্কে পরিবারগুলো তাদের বসতঘরের জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। নদীতে স্রোত বেশি থাকায় কোনো নৌকা তীরে ভেড়ানো যাচ্ছে না। কোনো যানবাহন না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ তাদের ঘরের আসবাব ও প্রয়োজনীয় জিনিস সরাতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে। অনেকে শ্রমিকের অভাবে পাকা ও আধাপাকা ঘর সরাতে পারছে না। এসব রেখেই চলে যেতে হচ্ছে অন্যত্র। দীর্ঘদিনের বসতি ফেলে যাওয়ার সময় অনেক নারী-পুরুষ কেবলই কাঁদছিলেন।
কাঁদতে কাঁদতে মরিয়ম বেগম (৩৫) বলেন, ‘আমরা অহন কই জাইমু। সব কিছু পদ্মায় লইয়া গেছে। আমার যে আর কোনোখানে যাওনের জায়গা নাই। এক মাস আগে বাপের বাড়িটা ভাঙছে, অহন স্বামীর বাড়িটা গেল। আমরা অহন পোলাপাইন লইয়া কই যামু।’
ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হোসাইন খান। তিনি নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে গ্রামবাসীকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানান। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা ও পুনর্বাসনের আশ্বাস দেন।
ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে শরীয়তপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তারেক হাসান বলেন, ‘অস্থায়ী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে ভাঙন রোধ করা যাবে না। স্থায়ী ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকল্প তৈরি করে চাহিদাপত্র পাঠানো হবে।’