ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2016/09/03/photo-1472911485.jpg)
যেকোনো ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামির রায় কার্যকরের ক্ষেত্রে কতগুলো নিয়ম-নীতি অনুসরণ করতে হয়। সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরই সরকারের নির্দেশে রায় বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হয় কারা কর্তৃপক্ষ। এ জন্য নেওয়া হয় সর্বোচ্চ সতর্কতা। আর এ কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
বিভিন্ন সময়ে ফাঁসির রায় বাস্তবায়নের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতরা জানিয়েছেন রায় বাস্তবায়নের বিভিন্ন ধাপের কথা।
কারা কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, রায় কার্যকরের আগে দেওয়া হয় মহড়া। এটি করা হয় যাতে রায় বাস্তবায়নের সময় কোনো বিপত্তি না ঘটে। ফাঁসির মঞ্চ, ম্যানিলা রোপসহ অন্যান্য বিষয় গভীরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। মঞ্চ ঘিরে থাকে উচ্চ আলো।
মূলত পরিবারের সদস্যরা দেখা করে যাওয়ার পর পরই আসামিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেওয়া ফাঁসির রায় কার্যকরের কথা। তারপর তাঁর কাছে নিয়ম অনুযায়ী জানতে চাওয়া হয় শেষ ইচ্ছার কথা। দেওয়া হয় রাতের খাবার। এ সময় কারাগারের চিকিৎসক আসামির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন।
এর কিছু পরেই আসামিকে গোসল করানো হয়। তখন কারাগারের কনডেম সেলে একজন মৌলভি গিয়ে আসামিকে কলেমা ও তওবা পড়ান। তার পরই সেলে প্রবেশ করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত জল্লাদরা।
জল্লাদরা সেলে প্রবেশ করেন আসামিকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সেলেই আসামির দুই হাত পিছমোড়া করে বেঁধে দেওয়া হয়। ডাণ্ডাবেড়ি পরানো দুই পায়ে আর তখনই পরানো হয় কালো রঙের যমটুপি।
ধীরে ধীরে আসামিকে জল্লাদরা নিয়ে যান ফাঁসির মঞ্চের দিকে। মঞ্চে ওঠার পর পাটাতনের ওপর দাঁড় করানো হয় আসামিকে।
এ সময় মঞ্চ ঘিরে থাকে পিনপতন নীরবতা। মঞ্চের সামনে এক সারিতে দাঁড়ানো থাকেন কর্মকর্তারা, সবার দৃষ্টি থাকে ঘড়ির কাঁটার দিকে। এর মধ্যে জেল সুপারের হাতে থাকে একটি লাল রুমাল। পূর্বনির্ধারিত সময় ধরে জেল সুপার তাঁর হাতে থাকা রুমালটি মাটিতে ফেলে দেন। আর তখনই জল্লাদ ফাঁসির মঞ্চের কপিকলের গিয়ার ধরে টান মারেন। এতে পাটাতনের ওপর রাখা কাঠটি সরে যায়। আর আসামি ঝুলে যায় শূন্যে। কার্যকর হয় রায়।
এভাবে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মঞ্চের গর্তে ঝুলে থাকে আসামির দেহ। সামনে থাকা কর্মকর্তাদের ইশারা পেয়ে জল্লাদরা গর্তে ঝুল থাকা দেহ ওপরে তুলে নিয়ে আসেন। ফাঁসির দড়ি খুলে দেওয়া হয়। লাশটি রাখা হয় কর্মকর্তাদের সামনে রাখা একটি টেবিলে।
তখন সিভিল সার্জন স্পাইনাল কর্ড, হাত ও পায়ের রগ কেটে আসামির মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এর পরই নিয়ম অনুযায়ী লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। কারাগারের ভেতরে থাকা অ্যাম্বুলেন্সে লাশটি তুলে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয় এবং কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই নিয়ে যাওয়া হয়।
তার পরই বাইরে এসে গণমাধ্যমকর্মীদের আনুষ্ঠানিকভাবে রায় কার্যকরের কথা জানান জেল সুপার।