পুলিশের ‘পিটুনিতে’ মোবাইল টাওয়ারকর্মীর মৃত্যু

নরসিংদীতে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে মোবাইল টাওয়ারের নৈশপ্রহরী মোহাম্মদ আলীর মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার বিকেলে তাঁর মৃত্যু হয়।
পরিবারের অভিযোগ, আটক করার পর আলীকে বেধরক পিটুনি দেয় পুলিশ। এতে তাঁর মৃত্যু হয়। তবে পুলিশের দাবি, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আলীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে ১৩০ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। এ সময় ফারুক মিয়া নামের আরো এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে আলী হত্যার প্রতিবাদে নরসিংদীর বেলাবো বাজারে বিক্ষোভ করে ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী। দোকানপাট বন্ধ করে দেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) হস্তক্ষেপে দোকানপাট খোলা হয়। গঠন করা হয় তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি।
নিহত মোহাম্মদ আলী বেলাব মাটিয়ালপাড়া এলাকার প্রয়াত জহিরুল ইসলামের ছেলে। তিনি মোবাইল টাওয়ারে নৈশপ্রহরীর কাজ করতেন। পাশাপাশি দিনে পান-সিগারেট বিক্রির দোকানও চালাতেন।
নিহতের পরিবার ও ডিবি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) খোকন চন্দ্র সরকার একটি দল নিয়ে বেলাবো উপজেলার বেলাবো বাজার মোবাইল টাওয়ার এলাকায় অভিযান চালান। এ সময় মোবাইল টাওয়ারের নৈশপ্রহরী ও পান-সিগারেট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী ও ফারুক নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় পুলিশ আলীকে এলোপাতাড়ি পিটুনি দেয়। এতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।
নিহত মোহাম্মদ আলীর তোহা নামের চার বছরের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। তাঁর মৃত্যুর প্রতিবাদে বেলাবো বাজারের ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দেন। উত্তেজিত এলাকাবাসী গোয়েন্দা পুলিশের এসআই খোকন চন্দ্র সরকারের বিচারের দাবিতে বাজারে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বেলাবো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে হাবিবা। তিনি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়ে ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীকে নিবৃত করেন। এ ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউএনও।
এর আগে দ্বীন ইসলাম নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে ডিবির এসআই খোকন সরকারের বিরুদ্ধে।
নিহত মোহাম্মদ আলীর মা হনুফা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে মোবাইল টাওয়ারের নাইট গার্ডের চাকরি করত। এর সাথে একটি দোকান দিয়ে পান-সিগারেট বিক্রি করে সংসার চালাত। আজ দুপুরে ডিবি পুলিশের এসআই খোকন চন্দ্র সরকার এসে আমার ছেলেকে মারপিট করতে করতে আধমরা করে ফেলে। পুলিশের কাছে গেলে পুলিশ বলে, তোর ছেলেকে আর ফিরে পাবি না বলে গাড়িতে তুইল্যা নিয়ে যায়। পরে ফোনে শুনি আমার বুকের ধন আর নাই। তারে মাইরা ফ্যালাইছে।’
নিহতের স্ত্রী ফাতেমা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘তোর জামাইকে আর ফেরত পাবি না বলে পুলিশ নিয়ে যায়।’ এ কথা বলতে বলতেই অচেতন হয়ে পড়েন তিনি।
ডিবি পুলিশের এসআই খোকন চন্দ্র সরকার মারপিটের কথা অস্বীকার করে বলেন, গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসার সময় মরজাল এলাকায় পৌঁছালে মোহাম্মদ আলী বুকে প্রচণ্ড ব্যথা বলে চিৎকার করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে জরুরি ভিত্তিতে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসক তাঁকে দ্রুত ব্যবস্থাপত্র দিয়ে ইসিজি করার সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
যোগাযোগ করা হলে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুর রহমান বলেন, মৃত মোহাম্মদ আলী একজন মাদক ব্যবসায়ী। তাঁদের কাছ থেকে ১৩০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে বেলাবো থানায় মাদকের একটি মামলা রয়েছে। নির্যাতনে নয়, হার্ট অ্যাটাকে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন ওসি।
বেলাবোর ইউএনও উম্মে হাবিবা বলেন, যুবক হত্যাকে কেন্দ্র করে বেলাবো বাজারে ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। উত্তেজিত জনতা মারমুখী অবস্থানে ছিল। পরে জেলা প্রশাসকের বরাত দিয়ে দোষীদের বিচারের আশ্বাসে তাদের নিবৃত করা হয়।
পুলিশ সুপার আমেনা বেগম বলেন, ডিবি পুলিশের হেফাজতে একজনের মৃত্যুর ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) শফিউর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ থাকলে দোষীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।