পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু, পরিবারে শোকের মাতম

নরসিংদীর বেলাবোতে গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে নিহত মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। এলাকায় বইছে তীব্র নিন্দার ঝড়। চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মোহাম্মদ আলীর লাশ গ্রামে পৌঁছালে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠে এলাকার পরিবেশ। শোকের ছায়া পড়ে গ্রামজুড়ে।
পুলিশ হেফাজতে নিহত হওয়ার ঘটনায় ৩ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। গতকাল বুধবার এ কমিটি গঠন করেন বেলাবো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে হাবিবা।
গত বুধবার বিকেলে নরসিংদী গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে আলীর মৃত্যু হয়। পরিবারের অভিযোগ আটক করার পর তাঁকে বেধরক পিটুনি দেয় পুলিশ। আস্ত ইট ও রড দিয়ে বার বার তাঁর বুকে আঘাত করা হয়। এতে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারা যান। ঘটনার প্রতিবাদে তৎক্ষণিক বেলাবো বাজারের ব্যবসায়ী ও উত্তেজিত এলাকাবাসী পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। দোকানপাট বন্ধ করে দেয় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ইউএনও উম্মে হাবিবার হস্তক্ষেপে গ্রামবাসীকে নিভৃত করা হয়।
নিহত আলী একটি মোবাইল ফোনের টাওয়ারের নাইটগার্ড হিসেবে কাজ করতেন। পাশাপাশি একটি পান-সিগারেটের দোকানও চালাতেন। নিহত মোহম্মদ আলীর কাছ থেকে ১৩০টি ইয়াবা বড়ি জব্ধ করেছে বলে দাবি গোয়েন্দা পুলিশের।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে মোহাম্মদ আলীর লাশ পৌঁছায় তাঁর গ্রামের বাড়িতে। লাশ গ্রামে পৌঁছালে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে এলাকার পরিবেশ। আলীর বৃদ্ধ মা ও স্ত্রী শোকে কাতর হয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। বাবাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যায় আলীর চার বছর বয়সী একমাত্র সন্তান তোহা। সন্ধ্যা ৬টার দিকে নিহত আলীর নিজ বাড়িতে জানাজা শেষে তাঁর লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
জানাজায় অংশ নেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বেলাবো উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সামসুজ্জামান ভূইয়া লিটন, বেলাবো ইউপি চেয়ারম্যান গোলাপ মিয়া, সাবেক চেয়ারম্যান আবু লায়েস মিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা বাচ্চু মিয়া প্রমুখ।
জানাজায় বক্তারা বলেন, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা সরকারের কাছে সুষ্ঠ তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বেলাবো উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সামসুজ্জামান ভূইয়া লিটন বলেন, ‘পুলিশের নির্যাতনের পর নরসিংদী জেলা হাসপাতালে যে পরিবেশ হয়েছিল তখন আমাদের বলার কিছুই ছিল না। আমরা আল্লার কাছে বিচার চেয়েছি।’
নিহতের মামা লিটন মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের ওপর জলুম করা হয়েছে। আমরা পারিবারিকভাবে আলোচনা করে ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করব। লিটন মিয়া আরো জানায়, মোহাম্মদ আলী মাদক ব্যবসায়ী নয়। পুলিশ তাঁকে মাদক ব্যবসায়ী বানাতে চাচ্ছে।’
গতকাল বুধবার ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক খোকন চন্দ্র সরকার এক দল পুলিশ নিয়ে বেলাবো উপজেলার বেলাবো বাজারের একটি টাওয়ার এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় মোবাইল টাওয়ারের নাইটগার্ড ও পান-সিগারেট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী ও ফারুক নামের দুইজনকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় পুলিশ মোহাম্মদ আলীকে এলোপাতাড়ি পিটুনি দেয়। আস্ত ইট ও রড দিয়ে বার বার তাঁর বুকে আঘাত করা হয়। এতে তাঁর বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব হয়। পরে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে গেলে তাঁকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই আলীর মৃত্যু হয়।