তিল ঠাঁই আর নাই রে…

কোরবানি ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরতে নৌ-বন্দরে কর্মস্থলগামী মানুষের ঢল নেমেছে। গতকাল শুক্রবারের মতো আজ শনিবারও লঞ্চঘাটে ছিলে উপচে পড়া ভিড়। বরিশাল থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলগামী লঞ্চগুলো ছিল কানায় কানায় পূর্ণ।
গত বৃহস্পতিবার এবং গতকাল শুক্রবার দুদিনে বরিশাল থেকে ঢাকাগামী ১৪টি লঞ্চ অর্ধলক্ষাধিক যাত্রী পরিবহন করেছে। আজ যাত্রী উপস্থিতি গত দুদিনের চেয়ে বেশি।
বেসরকারি লঞ্চ কোম্পানির শিডিউল অনুযায়ী স্পেশাল সার্ভিসের যাত্রী পরিবহনের জন্য ঢাকা থেকে লঞ্চগুলো দুপুরের মধ্যেই বরিশাল নৌবন্দরে ফিরে যায়। বিকেলের আগেই এসব লঞ্চে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ যাত্রী উঠে বসেন। লঞ্চের ডেকে স্থান না হওয়ায় কেউ ছাদে কিংবা লঞ্চের কার্নিশে বসে অথবা দাঁড়িয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
আজ শনিবার দুপুরের পরই নৌবন্দরে ঢাকাগামী যাত্রীদের ঢল নামে। হাজার হাজার যাত্রী সামাল দিতে বরিশাল মেট্রোপলিটন এবং নৌ-পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়।
লঞ্চচালক ও স্টাফরা জানান, গতকাল শুক্রবার বিপুলসংখ্যক যাত্রী ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। তবে আজ শনিবারও কর্মস্থলগামী যাত্রীর চাপ তুলনামূলক বেশি। এ কারণে আজ শনিবার পর্যন্ত রোটেশন পদ্ধতি চালু না করে লঞ্চগুলো স্পেশাল সার্ভিসে যুক্ত ছিল বলে একাধিক লঞ্চ মালিক জানান। এ ছাড়া আজ তাদের রোটেশনের বাইরে দু-একটি কোম্পানির অতিরিক্ত লঞ্চ থাকতে পারে।
বেসরকারি কোম্পানির ১৪টি লঞ্চের বাইরে বিআইডব্লিউটিসির একটি সরকারি জাহাজসহ দুটি স্টিমার ঢাকাগামী যাত্রীদের পাশাপাশি চাঁদপুরগামী যাত্রী পরিবহন করছে।
বরিশাল নৌবন্দর কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, ঈদের পরের দিনগুলোর মধ্যে আজ যাত্রীদের চাপ তুলনামূলক অনেক বেশি। তাই সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে যাত্রী নিয়ে ঘাট ত্যাগ করতে বলা হয়েছে লঞ্চ-সংশ্লিষ্টদের। এ ছাড়া যাত্রীদের যাতে কোনো ধরনের ভোগান্তিতে না হয় এ জন্য সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়ে মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রতি ঈদে যাত্রীদের নিরাপত্তায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ নৌবন্দরের দুটি প্রবেশপথে আর্চওয়ে দিয়ে থাকে। তবে এবার তাদের কাছে আর্চওয়ে চাইলেও তারা সেটা দেয়নি। তবে নৌপুলিশের সদস্যরা সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের পাশাপাশি নৌ ও মেট্রোপুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, আনসার, স্কাউট, রোভারের সদস্যসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো কাজ করছে।
নৌপথে কর্মস্থলগামী মানুষের উপচে পড়া ভিড় ও নৌযানগুলোতে স্থানসংকুলান না হওয়ায় এবার বিলাসবহুল লঞ্চের যাত্রীদের সিংহভাগই আকাশপথে পাড়ি জমিয়েছেন কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে।
ঈদ উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি তিনটি বিমান কোম্পানি ভাড়ার পাশাপাশি ফ্লাইটও বাড়িয়েছে। এর পরও তাঁরা চাপ সামলাতে পারছে না। বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস বাংলা ও নভোএয়ারের কোনো ফ্লাইটে বরিশাল থেকে ঢাকা যাওয়ার কোনো টিকেট নেই। সবগুলো ফ্লাইটের টিকেট আগাম বিক্রি হয়েছে বলে কাউন্টার থেকে জানানো হয়।
আজ বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। তবে জেলা বাসমালিক গ্রুপের উদ্যোগে প্রতিবারের মতো এবারও স্পেশাল সার্ভিস চালু রয়েছে। দূরপাল্লার বাসগুলোর পাশাপাশি বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটের বাসগুলো মাওয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত যাচ্ছে। এর পাশাপাশি মাইক্রোবাসগুলোও মাওয়া ঘাট পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করছে।
বরিশাল জেলা বাসমালিক সমিতির সভাপতি আফতাব আহম্মেদ বলেন, যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে স্পেশাল সার্ভিস চালু করা হয়েছে। কোরবানির ঈদ শেষে বরিশাল বাস টার্মিনালে আজকেই সর্বোচ্চ ভিড় হয়েছে। তবে তা সামাল দিতেও আগে থেকেই প্রস্তুতি ছিল।