গাজীপুরে টুম্পা হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ

গাজীপুরের গৃহবধূ নুশরাত জাহান টুম্পাকে (৩০) হত্যার প্রতিবাদে এবং অভিযুক্ত স্বামী গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর সোলায়মান মিয়ার বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী এলাকার কোনাবাড়ী-কাশিমপুর সড়কে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে শত শত নারী-পুরুষ অংশ নেয়। মানববন্ধন শেষে এলাকাবাসী একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
এ সময় নিহত নুশরাত জাহান টুম্পার বাবা নজরুল ইসলাম জানান, বিয়ের কয়েক বছর পর থেকেই সোলায়মান টুম্পাকে নানাভাবে নির্যাতন করে আসছিল। একমাত্র ছেলে নাফির মুখের দিকে তাকিয়ে টুম্পা সংসার করে আসছিল। কাউন্সিলর সোলায়মানকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান। তিনি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রীর কাছে এ হত্যার সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচারের দাবি জানান।
মানববন্ধনে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর শফিকুল আমিন তপন, আজাহারুল ইসলাম মোল্লা, মো. খলিলুর রহমান, মো. আব্বাছ উদ্দিন খোকন, শাহনাজ পারভিন, মাহমুদা আক্তার মুক্তি, শিল্পপতি মফিজুল ইসলাম, জাকির হোসেন, ফারুক হোসেন, ইসমাইল হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা সরবেশ আলী খান, শেখ মো. আক্কাস আলী, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুল্লাহ সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধন চলাকালে নিহত টুম্পার বাবা-মা ও একমাত্র ছেলে নির্জন ইসলাম নাফি (৮) কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় নাফি জানায়, তার বাবা প্রায় সময়ই তার মা টুম্পাকে মারধর করত। ওই সময় সে তার মায়ের কাছে গেলে তার বাবা তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিত। নাফি তার মায়ের হত্যার বিচার চায়।
এদিকে আজ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কোনাবাড়ী পারিজাত প্রাইমারি স্কুল মাঠে টুম্পার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সোলায়মান মিয়া তাঁর স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান নিয়ে ঢাকার উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডের ৪ নম্বর বাসায় কয়েক বছর ধরে বসবাস করছেন।
গত রোববার বিকেলে সোলায়মান, টুম্পা, টুম্পার ভাই সাইফ ও তাঁর স্ত্রী বসুন্ধরা এলাকায় বেড়াতে যান। গাড়িতে সোলায়মানের মোবাইলে অন্য এক মেয়ের ছবি দেখতে পেয়ে তাঁর সঙ্গে টুম্পার ঝগড়া ও কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে রাতে সোলায়মান ও টুম্পাকে তাদের ঢাকার উত্তরার বাসায় নামিয়ে ভাই সাইদ তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে চলে যান। ওই সময় তাদের সন্তান নাফি (৮) উত্তরাতে তার নানা নজরুল ইসলামের বাসায় ছিল। পরে রাতে কোনো এক সময় টুম্পাকে নির্যাতন করে হত্যার পর সোলায়মান বাসার বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যায়। সকালে গৃহপরিচারিকা বাসায় দরজা বন্ধ দেখতে পেয়ে টুম্পার মাকে মোবাইল ফোনে জানায়। খবর পেয়ে তারা ওই বাসায় এসে জানালা ভেঙে ঘরে ঢুকে খাটের ওপর টুম্পাকে পড়ে থাকতে দেখে। পরে তাকে উদ্ধার করে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক টুম্পাকে মৃত ঘোষণা করেন। সন্ধ্যায় উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ টুম্পার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। ঘটনার পর থেকে স্বামী কাউন্সিলর সোলায়মান পলাতক।
টুম্পার বাবা নজরুল ইসলাম জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক মঙ্গলবার তাঁদের জানিয়েছেন, টুম্পাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার আলামত পাওয়া গেছে।