চিকিৎসকের সন্তানকে মৃত ঘোষণা, পরে জীবিত

চিকিৎসক দম্পতির ঘরে জন্ম নিয়েছিল শিশুটি। সে হিসেবে অন্য অনেক শিশুর চেয়ে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানেই তার জন্ম বলতে হবে। কিন্তু চিকিৎসকদের অবহেলা থেকে মুক্তি পায়নি সেও। জন্মের দুই ঘণ্টা পরেই ভালোমতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেছেন চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল সিএসসিআরের চিকিৎসকরা।
সিএসসিআর হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের মেডিকেল অফিসার রুমার সই করা ডেথ সার্টিফিকেটে শিশুর নামের স্থানে লেখা রয়েছে, বেবি অব রিদওয়ানা, বয়স শূন্য দিন, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১১৬০৯/১৬, বাবার নাম নূরুল আজম, মায়ের নাম রিদওয়ানা, ধর্ম ইসলাম।
মৃত্যুর কারণ হিসেবে অপরিণত অবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
অবশ্য চিকিৎসক মায়ের সন্তান হওয়ায় এ যাত্রায় বেঁচে গেছে সে। মা নিজেই সন্তানকে পরীক্ষা করে পরে অন্য একটি হাসপাতালে ভর্তি করে বাঁচিয়েছেন তার জীবন।
বর্তমানে নগরীর মেহেদীবাগের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালের নিউনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে সদ্য ভূমিষ্ঠ এই মেয়েশিশুটিকে।
ঘটনাটি নিয়ে এখন তোলপাড় চলছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে।
গতকাল সোমবার রাতে সিএসসিআর হাসপাতালে একটি মেয়েসন্তান জন্ম দেন চিকিৎসক রিদওয়ানা কাউসার। চিকিৎসক দম্পতি রিদওয়ানা ও নুরুল আজিমের সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানকে রাতেই মৃত ঘোষণা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শিশুটির মৃত্যুর ছাড়পত্রও দিয়ে দেয় তারা।
কিন্তু সন্তানের মৃত্যু নিয়ে সন্দিহান ছিলেন মা রিদওয়ানা। কর্তৃপক্ষের নিষেধ সত্ত্বেও মৃত সন্তান হিসেবে প্যাকেট করা শিশুটিকে পরীক্ষা করেন তিনি। প্যাকেট খুলে শিশুটিকে নড়াচড়া করতে দেখতে পান মা। তবে তাঁর কথা বিশ্বাস করতে চাননি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। পরে আজ মঙ্গলবার ভোরে শিশুটিকে আরেকটি হাসপাতালে ভর্তি করেন অভিভাবকরা। সেখানে নিউনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছে সে। শিশুটিকে সুস্থ করে তুলতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন ম্যাক্স হাসপাতালের চিকিৎসকরা।এ বিষয়ে শিশুটির মা আলী কদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডেন্টাল সার্জন ডা. রিদওয়ানা জানান, স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে গত রাত ১টার দিকে একটি মেয়েসন্তানের জন্ম দেন তিনি। নির্দিষ্ট তারিখের আগেই তাঁর সন্তান জন্ম নেয়। ডেলিভারি রুমে থাকা অবস্থায় তিনি গাইনি চিকিৎসককে বলতে শোনেন যে, সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুটি ভালো আছে। অথচ এর দুই ঘণ্টা পর ডেথ সার্টিফিকেট দিয়ে একটি প্যাকেটে করে শিশুটি তাঁর কক্ষে পাঠিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। বাক্স খুলে দেখার পর শিশুটিকে নড়াচড়া করতে দেখতে পান তিনি।
রিদওয়ানা বলেন, ‘দ্রুত বাচ্চাকে এনআইসিইউ যেটা নবজাতকদের শিশুদের ওখানে পাঠাই। আমার কষ্ট হচ্ছে এটাই যে ওখানে যিনি ছিলেন ডিউটিতে তিনি বাচ্চাকে একটু ধরেও দেখেন নাই। তিনি সরাসরি বললেন যে, বাচ্চা তো মরে গেছে। তো সবাই বলল যে বাচ্চা তো নড়ে। কিন্তু সে বলে যে না এটা বাচ্চা নড়তেছে না বাচ্চার মাসল (পেশি) নড়তেছে। বাচ্চা ব্রিদ করতেছে না।’
পরে শিশুটিকে ম্যাক্স হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা জানান রিদওয়ানা।
এ বিষয়ে ম্যাক্স হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বসু বন্ধু বড়ুয়া বলেন, যখন শিশুটিকে আনা হয় তখন জানানো হ্য়, সিএসসিআর কর্তৃপক্ষ বাচ্চাটিকে মৃত ঘোষণা করেছে।
দ্রুত বাচ্চাটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়। এই মুহূর্তে বাচ্চাটা ভালো আছে। তবে যেহেতু শিশুটি অপরিপণ (প্রিম্যাচিওর), সে কারণে কিছুই বলা যায় না। এখন সে শ্বাস নিচ্ছে।
একই হাসপাতালের আরেক শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. শাহিন আকতার জানান, ভোরে যখন শিশুটিকে আনা হয় তখন সে তেমন নড়াচড়া করছিল না। কিন্তু তার হৃদস্পন্দন পাওয়া যায়। পরে দ্রুত তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এখন সে নিশ্বাস নিচ্ছে। তবে যেহেতু শিশুটির ওজন মাত্র ৫০০ গ্রাম সেহেতু নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না।
এদিকে এ ঘটনার জন্য তদন্ত কমিটি গঠনসহ অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে সিএসসিআর কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. জামাল আহমেদ বলেন, শিশুটির ডেথ সার্টিফিকেট যিনি লিখেছেন তিনি কিসের ভিত্তিতে লিখলেন, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েছেন কি না বা কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটল সেসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যেহেতু বিষয়টির সঙ্গে অনেক মানুষ জড়িত, তাই ভালোভাবে তদন্ত করে দেখা হবে। সবকিছু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিকে সাজা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।