যুদ্ধের বিভীষিকায় যেভাবে ‘বৃদ্ধ শিশু’ পরিচিতি পেল লানা

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের নির্মম বলি হচ্ছে শিশুরা। এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনা আট বছর বয়সী লানা শরিফের। যাকে এখন সবাই ‘বৃদ্ধ শিশু’ নামে চেনে। যুদ্ধের ভয়াবহতায় তার ত্বকের স্বাভাবিক রঙ হারিয়ে গেছে এবং চুল সাদা হয়ে গেছে– যা তার গভীর মনস্তাত্ত্বিক আঘাতের সুস্পষ্ট প্রমাণ। লানার গল্প গাজায় শিশুদের বিধ্বস্ত শৈশবের নির্মম বাস্তবতা তুলে ধরেছে। বিমান হামলা, ভেঙে পড়া চিকিৎসাব্যবস্থা ও মানসিক সহায়তার অভাবে সেখানকার শিশুরা এক অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছে। খবর ওয়াটান.কমের।
লানার দুর্দশা শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। তার পরিবার রাফাহ থেকে পালিয়ে যে এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিল সেখানে একটি বিমান হামলা হয়। সেই হামলায় মারাত্মক আতঙ্কিত হয়ে পড়ে লানা, যার ফলে দিনের পর দিন কাঁপতে থাকে। এই ঘটনার পরপরই তার মুখ ও শরীরে সাদা দাগ দেখা দেয় এবং চুল ধীরে ধীরে ধূসর হতে শুরু করে। চিকিৎসকরা নির্ণয় করেন যে, তীব্র স্নায়বিক আঘাতের কারণে তার ভিটিলিগো (vitiligo) রোগ হয়েছে।
লানার বাবা-মা বারবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিলেও গাজার কঠিন পরিস্থিতি – যেমন ওষুধের তীব্র সংকট ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অপ্রতুলতা– লানার অবস্থাকে আরও খারাপ করে তোলে। তারা আন্তর্জাতিক মেডিকেল টিমের কাছে সাহায্য চান। বিদেশি চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেন, লানার বিদেশে বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রয়োজন, যার মধ্যে লেজার থেরাপি ও মনস্তাত্ত্বিক যত্ন অন্তর্ভুক্ত।
তবে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ লানার নাম মেডিকেল রেফারেল (সুপারিশ) তালিকায় যোগ করতে রাজি হয়নি। তাদের যুক্তি, ক্যানসার ও হৃদরোগীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। লানার অবস্থা উন্নত চিকিৎসার জন্য ‘তৎক্ষণাৎ জরুরি নয়’।
ওই শিশুকে একটি ক্যাম্পে মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসার জন্য পাঠানো হলেও এতে কোনো বাস্তব উন্নতি হয়নি। সে এখনও বিমান হামলার ভয়ে ভোগে। তার চেহারার কারণে অন্যদের দ্বারা হয়রানির শিকার হওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন।
লানা বলেন, ‘মানুষ যেভাবে আমার দিকে তাকায়, সেটাতেই আমি সবচেয়ে বেশি ভয় পাই।’

লানার ঘটনা মোটেই ব্যতিক্রমী নয়। ইউনিসেফের অনুমান, গাজায় ১ দশমিক ২ মিলিয়নেরও বেশি শিশুর জরুরি মনস্তাত্ত্বিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার প্রয়োজন।
মানবাধিকার প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায় যে, গাজার প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে ৯ জনের পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের (পিটিএসডি) লক্ষণ দেখা যায়।