চাঁদাবাজির মামলায় সাবেক এপিএসের বাবা পুলিশ হেফাজতে

ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট হাউজিং স্টেট এলাকার বাসিন্দা মানস কুমার মুখার্জীকে (৬৯) চাঁদাবাজির মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একদিনের পুলিশি হেফাজতে (রিমান্ড) নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ রোববার ফরিদপুর-১ আমলি আদালতের বিচারক মো. হামিদুল ইসলাম এই আদেশ দেন।
মানস মুখার্জী প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ও ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক, প্রায় এক ডজন চাঁদাবাজি ও ধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামি সত্যজিৎ মুখার্জীর বাবা। চাঁদাবাজির মামলায় সত্যজিৎকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
ফরিদপুর শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. সেলিম হাসানের (৪৩) করা আড়াই লাখ টাকার চাঁদাবাজির মামলায় গত ৫ মে শহরের গোয়ালচামট হাউজিং স্টেট এলাকার বাড়ি থেকে কোতোয়ালি থানার পুলিশ মানস মুখার্জীকে গ্রেপ্তার করে। ওই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) বাশার আদালতের কাছে সাতদিনের হেফাজতের আবেদন করেন।
হেফাজতের শুনানির জন্য মানস কুমার মুখার্জীকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচে অবস্থিত কোর্টহাজতে আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে আনা হয়। সেখান থেকে হাতকড়া পরিয়ে বেলা সোয়া ১১টার দিকে ফরিদপুরের ১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক মো. হামিদুল ইসলামের আদালতে আনা হয়। সিআর মামলা শেষে জিআর মামলার শেষদিকে মানসের হেফাজত ও জামিনের শুনানি শুরু হয় বেলা পৌনে ১২টার দিকে। শুনানি চলে ১২টা ১০ মিনিট পর্যন্ত।
শুনানিতে আসামিপক্ষে ছিলেন ফরিদপুর জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলজার হোসেন মৃধা, অ্যাডভোকেট তৌহিদুল ইসলাম স্ট্যালিন, আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, ছরোয়ার হোসেন, নূরে আলম ও শফিকুল ইসলাম। বাদীপক্ষে ছিলেন স্বপন কুমার পাল, জাহিদ ব্যাপারী, গোলাম রব্বানী বাবু মৃধা, অনিমেষ রায়, প্রদীপ কুমার দাস লক্ষণ, আবু জাফর ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল।
বাদীপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, এই চাঁদাবাজি মামলার প্রধান আসামি ও তাঁর সহযোগীরা কে কোথায় পালিয়ে আছেন এবং চাঁদার টাকা কোথায় রয়েছে তা উদ্ধারের এবং অস্ত্রটি কোথায় রয়েছে তা জানতে আসামিকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন। তাই পুলিশের আবেদন করা সাতদিনের হেফাজত মঞ্জুর করা হোক।
এ সময় হেফাজতের তীব্র বিরোধিতা করে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, রিমান্ড হচ্ছে একটি কালো আইন। আসামি বয়স্ক মানুষ। একাধিক রোগে আক্রান্ত। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক এবং মুক্তিযোদ্ধা। জীবন বাজি রেখে আসামি দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। তিনি একজন কৃষক। তাঁর পক্ষে চাঁদাবাজি করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া বাবা ও ছেলে একসাথে কোনোদিন চাঁদাবাজি করতে পারে না। তাই সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আসামির হেফাজত আবেদন নামঞ্জুর করা হোক। প্রয়োজনে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হোক।
আসামিপক্ষের বক্তব্য শেষ হলে বাদীপক্ষের আইনজীবী জাহিদ ব্যাপারী বলেন, ‘আসামিকে একজন কৃষক হিসেবে দাবি করা হলেও তিনি এখন সাততলা বিল্ডিংয়ের মালিক, রাজকীয় জীবনযাপন করেন। শহরের নিউমার্কেট, হেলিপোর্ট মার্কেট, টিটিসির মোড়ে তাঁর নামে অনেকগুলো দোকান রয়েছে। চাঁদাবাজি করতে বয়স লাগে না। ছেলের ক্ষমতায় তিনি অনেক ক্ষমতা দেখিয়েছেন। কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে।
এ সময় দুই পক্ষের আইনজীবীরা একসাথে কথা বলে উঠলে আদালতে শোরগোলের সূচনা হয়। রায় দিতে বিচারক সময় নেন। পরে একদিনের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেন।
এদিকে পলাতক সত্যজিৎ মুখার্জী তাঁর বাবার বয়স ৭৫ বছর উল্লেখ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেও মামলার বাদী সেলিম হাসান মানস কুমার মুখার্জীর বয়স উল্লেখ করেছেন ৫৯ বছর। তবে আজ তাঁর আইনজীবীরা যে পরিচয়পত্র আদালতে উপস্থাপন করেছেন, সেখানে তাঁর বয়স ৬৯ বছর দেখানো হয়েছে।