‘রাষ্ট্রের প্রশ্রয়েই বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে’

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিশিষ্টজনরা। তাঁরা মনে করেন, স্বাধীনতার এত বছরেও দেশ এগোলেও মোটেই বদলায়নি বিচারহীনতার সংস্কৃতি। আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সন্ত্রাসবিরোধী ত্বকী মঞ্চের উদ্যোগে ‘ত্বকী হত্যার বিচারে রাষ্ট্রের অনীহা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তাঁরা এমন মন্তব্য করেন।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘রাষ্ট্র ওপরে ওপরে বদলেছে। নামে বদলেছে এবং শাসক যারা তারা বদলে গেছে। গদিতে নতুন নতুন লোক বসছে, কিন্তু রাষ্ট্র বদলায়নি। এবং রাষ্ট্রের সেই নৃশংস চরিত্র বারবার উন্মোচিত হচ্ছে।’
দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৪ বছর পরও ত্বকীর মতো একজন মেধাবী কিশোরের বাবাকে পুত্র হত্যার বিচারের দাবিতে রাস্তায় দাঁড়ানোর ঘটনাকে রাষ্ট্রযন্ত্রের চরম নিষ্ঠুরতা ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মন্তব্য করেন বক্তারা। তাঁরা মনে করেন, ক্ষমতার রাজনীতিই এর বড় কারণ।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান বলেন, ‘স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যে সন্ত্রাসী মাফিয়াচক্র আজকে নারায়ণগঞ্জের হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী, লুটপাটের জন্য দায়ী, সেই পরিবারের সাথে তিনি আছেন।’
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যদি বাস্তবায়ন করতে হয় তাহলে ত্বকী হত্যাকারী, অভিজিৎ হত্যাকারী কিংবা জাতীয় সম্পদ, দেশের ভেতরের সম্পদ, নদী দখলকারী, লুণ্ঠনকারী, বাসের চাঁদা আদায়কারী- এই ধরনের দুর্বৃত্তায়নের যে জাল, সেই জালের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে।
বিভিন্ন সময়, নানা মঞ্চ থেকে প্রতিবাদের জায়গা তৈরির চেষ্টা হলেও একটা সময় ক্ষমতার রাজনীতি স্থায়ী করতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বেআইনি ইঙ্গিত বাধা হয়ে দাঁড়ায় বলে অভিযোগ বক্তাদের।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, রাষ্ট্রক্ষমতাটা আজকে অপরাধী শক্তিদের সমর্থনের ওপর ভিত্তি করে যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন অপরাধীদের প্রশ্রয় না দিলে আপনার আর কোনো উপায় থাকে না।
এ অবস্থাকে অস্বাভাবিক উল্লেখ করে মানুষকে জেগে ওঠার তাগিদ দেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী। তিনি বলেন, ‘সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে এটা আমাদের জন্য কোনো মাথাব্যথা নয়। সরকার জনবিচ্ছিন্ন হলে তো আমাদেরই সুবিধা, আমরা জনতার কাছে যাওয়ার একটা সুযোগ পেতে পারি। সেই সুযোগটা আমরা নিতে পারছি না এখনো পর্যন্ত।’