সনদ দিতে ঘুষ দাবি, অধ্যক্ষের কক্ষে ছাত্রের আত্মহত্যার চেষ্টা

নরসিংদীর মনোহরদীতে সনদ না দেওয়ায় অধ্যক্ষের কার্যালয়েই বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন শহীদুল ইসলাম (১৯) নামে এক শিক্ষার্থী।
মুমূর্ষু অবস্থায় শহীদুলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আজ শনিবার দুপরে মনোহরদী উপজেলা হরিনারায়ণপুর ফাজিল মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে। সনদ দেওয়ার বিনিময়ে ঘুষ দাবির অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর থেকেই পলাতক তিনি। পুলিশের পাশাপাশি তাঁকে আটক করতে মাঠে নেমেছে এলাকাবাসী।
এদিকে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে মাদ্রাসা বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি।
শিক্ষার্থীর পরিবার ও মাদ্রাসা সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর মনোহরদী উপজেলার হরিনারায়ণপুর ফাজিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষা দেন দৌলতপুর ইউনিয়নের কেরানীনগর গ্রামের শহীদুল ইসলাম। ভালো ফলাফল নিয়ে তিনি পাস করেন। উচ্চশিক্ষার আশায় গ্রামের দরিদ্র শহীদুল মনোহরদী ডিগ্রি কলেজে অনার্সে ভর্তির জন্য আবেদন করেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে ভর্তির জন্য বাছাই করে। শিক্ষা বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী অনার্স ভর্তির জন্য প্রতিষ্ঠানে আলিম পাসের সনদ জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু এক মাস ধরে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন মৌলভীর কাছে সনদ উত্তোলনের জন্য ধরনা দিচ্ছেন। কিন্তু তিনি শহীদুলকে সনদ দিতে রাজি হচ্ছেন না।
আরো জানা যায়, সর্বশেষ গত সপ্তাহে সনদ দেওয়ার জন্য শহীদুলের কাছে তিন হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে দরিদ্র এই শিক্ষার্থী অধ্যক্ষের চাহিদামতো তিন হাজার টাকা জোগাড় করতে পারেননি। শেষে পর্যন্ত কৃষিকাজ করে ৫০০ টাকা তুলে দেন অধ্যক্ষের কাছে। এতেও তিনি সনদ দিতে রাজি হননি।
আজ শনিবার মনোহরদী ডিগ্রি কলেজে অনার্স ভর্তি পরীক্ষার শেষ দিন। সনদ দেওয়া হবে না বলে শিক্ষার্থী শহীদুলকে পুনরায় জানিয়ে দেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। সনদ না দিলে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করবেন বলে জানান শহীদুল। পরে কোনোভাবেই সনদ না নিতে পেরে অধ্যক্ষের সামনে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে মাদ্রাসার শিক্ষকরা তাঁকে উদ্ধার করে মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে বিকেলে মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে, শিক্ষার্থীর বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টার খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে তাঁর গ্রামের বাসিন্দারা। অজ্ঞান হয়ে যান তাঁর মা।
অসুস্থ শিক্ষার্থীর চাচাতো ভাই জামাল বলেন, ছোটবেলা থেকেই উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখতেন শহীদুল। নুন আনতে পান্তা ফুরালেও পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। কিন্তু আলিম পাসের পর ভর্তির জন্য সনদ দিচ্ছিলেন না মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। তাই মনের দুঃখে বিষ পান করেন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য বজলুর রহমান বলেন, ‘ছেলেটা অত্যন্ত মেধাবী। অনার্স ভর্তির জন্য তাঁকে সার্টিফিকেট দিচ্ছিলেন না মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। নিয়মবহির্ভূতভাবে তা আটকিয়ে রেখেছিলেন। পরে সনদ দেওয়ার জন্য আমি তাঁকে অনুরোধ করি। কিন্তু তিনি শোনেননি। তিনি তিন হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। ৫০০ টাকা দেওয়ার কথা বললেও তিনি রাজি হননি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদ্রাসার এক শিক্ষক জানান, অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন অতন্ত দুর্নীতিবাজ। টাকা ছাড়া শিক্ষার্থী তো দূরের কথা, কোনো শিক্ষকের কাজও তিনি করেন না। তাঁর সামনে ছেলেটা বিষ খেলেও অধ্যক্ষ তাঁকে একবারও বাধা দেননি। তাঁর কাছে টাকাই সব।
এদিকে, ঘটনার পর থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ করে ঘা ঢাকা দিয়েছেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। একাধিকবার তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ০১৭১৮৮০৭৮৪৯ নম্বরে যোগাযোগ করে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) মেহেদী মাসুদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঘটনার পর থেকে অধ্যক্ষকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ ও এলাকাবাসী মিলে তাঁকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছি।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি সানাউল্লাহ হক নিরু বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সনদ দেওয়া ক্ষেত্রে টাকা নেওয়ার কোনো বিধান নেই। এটা আমি প্রথম শুনেছি। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তাহলে মাদ্রাসা বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’