সুন্দরবনসহ সারা দেশে বৃক্ষ ও বন জরিপ শুরু

সারা দেশে দ্বিতীয় বারের মতো শুরু হয়েছে বৃক্ষ ও বনজরিপ। আজ শনিবার দুপুরে সুন্দরবনে এই জরিপ কাজের উদ্বোধন করেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।
দুপুরে হাড়বাড়িয়া ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রের কাছে একটি পর্যটন জাহাজে এই জরিপ কাজের উদ্বোধন করা হয়। সারা দেশের প্রায় এক হাজার ৮৫৮টি স্থানে এ জরিপ কাজ চালানো হবে। প্রথম বছরে সুন্দরবন, দেশের উপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকায় এ জরিপ চলবে। পরের বছর দেশের অন্যান্য স্থানে জরিপ করা হবে।
বৃক্ষ ও বনজরিপ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, এ জরিপ দেশের সরকারি বন ও গ্রামীণ বনের উন্নয়ন, ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের উদ্যোগকে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় সঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন তার দিক নির্দেশনা দেবে। পাশাপাশি সরকার তথা বন বিভাগ বনের অবক্ষয় রোধ এবং বনবৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন বাস্তবমুখী যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সেখানেও বিশেষ অবদান রাখবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধান বন সংরক্ষক মো. ইউনুছ আলী। এ সময় বক্তব্য দেন বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক, খুলনা বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ফারুক হোসেন, উপ প্রধান বন সংরক্ষক জহীর ইকবাল, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিসংস্থার (এফএও) চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ও ইউএসএআইডির প্রতিনিধি মেথিউ হেনরি, খুলনার বন সংরক্ষক জহির উদ্দীন আহমেদ।
এ সময় মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফাসহ সুন্দরবন অঞ্চলের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জরিপ কার্যক্রমের সদস্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক প্রফেসর ড. নাজমুস সাদাত বলেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই বনজ সম্পদ জরিপ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এর সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন দাতাসংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয় ও বন বিভাগ। এই গবেষণার মাধ্যমে দেশের প্রকৃত বনজ সম্পদ কতটুকু আছে সেটা চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া এই গবেষণায় সারা দেশের গ্রামীণ বনজসম্পদের পরিমাণও জানা যাবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রকিবুল হাসান সিদ্দিকী বলেন, এই জরিপ কার্যক্রমের প্রধান তিনটি উদ্দেশ্য হচ্ছে, বনজসম্পদ চিহ্নিতকরণ, পাঁচ বছর পরে আবার গবেষণা করে দেখা বনে কী ধরনের পরিবর্তন হয়েছে এবং এই পরিবর্তনে কি কি প্রভাব কাজ করেছে। এ ছাড়া কার্বন কতটুকু আছে। এই কার্বণ নিঃসরণের জন্য উন্নত বিশ্বের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা।
নিজের বক্তব্যে প্রধান বন সংরক্ষক মো. ইউনুস আলী বলেন, সমন্বিতভাবে বনজসম্পদ জরিপের এই কাজ শুরু হয়েছে। ইউএসএআইডি এতে অর্থায়ন করছে। জরিপের মাধ্যমে দেশে কী পরিমাণ বন ও কাঠ আছে তা জানা যাবে। এ ছাড়া কার্বন নির্ণয় করা গেলে জানা যাবে যে, বাংলাদেশে কী পরিমাণ কার্বন মজুদ আছে। এছাড়া কোন ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান কি ধরনের বর্জ্য নদীতে নিঃসরণ করছে এবং তাতে কী ধরনের ক্ষতি হচ্ছে তাও এই জরিপের মাধ্যমে জানা যাবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ বন বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বনজ সম্পদের সুরক্ষা, সর্বোত্তম ব্যবহার সুনিশ্চিত, বনের আচ্ছাদন বৃদ্ধি এবং বন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশে এ জরিপ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের বন অধিদপ্তর এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। তাদের সহযোগিতা করছে স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় সরকার, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিসংস্থা (এফএও), ইউএসএআইডি এবং সিলভাকার্বন। ২০১৮ সালে এই দফার জরিপ কাজ শেষ হবে। এটিই দেশের প্রথম পরিপূর্ণ বনজসম্পদ জরিপ বা গবেষণা কার্যক্রম। এর আগে ২০০৫ সালে সারাদেশে এ ধরনের জপির কাজ চালানো হয়। তবে সেটি পূর্ণাঙ্গ জরিপ কাজ ছিল না।