সাজা ভোগের পরও কারাগারে ১৫৭ জন বিদেশি

বিভিন্ন অপরাধে সাজা ভোগ করার পরেও প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় দেশের কারাগারগুলোতে ১৫৭ জন বিদেশি বন্দি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৯ জন নারী রয়েছেন। আজ রোববার (২১ জানুয়ারি) হাইকোর্টে পাঠানো কারা কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
কারাগার কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদনে বলা হয়, সাজা ভোগের পরও কারাগারে থাকা আসামিদের মধ্যে ১৫০ জন ভারতের, পাঁচজন মিয়ানমারের এবং একজন করে পাকিস্তান ও নেপালের নাগরিক রয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, সাজা খাটা হলেও অন্য দেশের নাগরিক হওয়ায় সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এসব ব্যক্তিদের নিজ দেশে পাঠাতে হয়। সেই প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের মুক্তি দেওয়াও সম্ভব নয়।
এ সংক্রান্ত একটি মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কমলপুর থানার বাসিন্দা গোবিন্দ উড়িয়াকে (২৬) আটক করে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। ওইদিনই শ্রীমঙ্গল থানায় সোপর্দ করে তার নামে মামলা করে বিজিবি। তদন্তের পর একই বছর ৪ ফেব্রুয়ারি অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
পরে গোবিন্দ উড়িয়ার বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ২৪২ ধারা ও দি কন্ট্রোল অব এন্ট্রি অ্যাক্ট, ১৯৫২ আইনের ৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। বিচার প্রক্রিয়া শেষে মৌলভীবাজারের চতুর্থ আদালতের বিচারক এম মিজবাহ উর রহমান দোষ স্বীকার এবং অতীতে অনুপ্রবেশের অভিযোগ না থাকায় গোবিন্দ উড়িয়াকে দুই মাস ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
রায়ে বলা হয়, সাজার মেয়াদের চেয়ে চার দিন বেশি সাজা ভোগ করে ফেলেছেন গোবিন্দ উড়িয়া। তাই তার প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করতে মৌলভীবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপারকে নির্দেশ দেন আদালত। এ রায়ের পর দুই বছর কেটে গেলেও প্রত্যাবাসন হয়নি গোবিন্দ উড়িয়ার। ফলে কারামুক্তিও ঘটেনি।
সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও দুই বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন মর্মে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর গোবিন্দ উড়িয়াকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল।
ওই প্রতিবেদনটি যুক্ত করে গত ১১ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বিভূতি তরফদার। সাজা ভোগ করা কারাবন্দি গোবিন্দ উড়িয়ার কারামুক্তি এবং তার প্রত্যাবাসনের সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করা হয় রিটে। গত ১৫ জানুয়ারি এ রিটের প্রাথমিক শুনানির পর রুলসহ আদেশ দেন হাইকোর্ট।
অন্তর্বর্তী আদেশে গোবিন্দ উড়িয়াকে কারামুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। আর দণ্ড বা সাজা ভোগ করার পরও প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা না করে কারাবন্দি রাখা হয়েছে—এমন বিদেশি নাগরিকদের তালিকা দিতে বলেন আদালত। কারা মহাপরিদর্শককে এ নির্দেশ দিয়ে ১০ মার্চ পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য করা হয়। এরপর আদালতে দাখিলের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠায় কারা অধিদপ্তর।
কারাবন্দি এই বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে সাধারণত অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে দি কন্ট্রোল অব এন্ট্রি অ্যাক্ট, ১৯৫২, পাসপোর্ট আইন, ১৯৫২ এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলা রয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চির করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত বলেন, ‘পরবর্তী ধার্য তারিখে এ প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হবে।’