প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়ে ইমেইল করা সৌদি যুবদলের দুই নেতা গ্রেপ্তার
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিয়ে ইমেইল করার অভিযোগে সৌদি প্রবাসী ও দেশটির যুবদলের একাংশের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের (সিটিটিসি) সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ।
সিটিটিসি বলছে, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখ বিকেলে বাংলা ও ইংরেজির দুই ভাষায় পাঠানো ইমেইলে গুলি করে হত্যার নির্দিষ্ট সময় ও তারিখ উল্লেখ করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া বিভাগের মেইলের ঠিকানায় ইমেইল করেন তারা।
আজ রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এ তথ্য জানান। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- সৌদি প্রবাসী ও সৌদি যুবদলের একাংশের সভাপতি কবির হোসেন ও যুবদল নেতা দীন ইসলাম। তাদের সৌদি আরব সরকারের সহযোগিতায় ও দেশটিতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে গ্রেপ্তার করে গত ২৯ জানুয়ারি দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া পাবলিক রিলেশন সেন্টারের ইমেইলে ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল বিকেলে রিয়েলমি-৫৫কেএসএ জিমেইলের একটি ঠিকানা থেকে হুমকি বার্তা সংবলিত ইমেইল আসে। মেইলের সাবজেক্ট লাইনে ‘২৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভোর ৪টায় গুলি করা হবে। বাংলাদেশ পুলিশের ক্ষমতা নেই এই হামলা ঠেকানোর। মহারণের সাক্ষী হবে ২৭ এপ্রিল’ এবং ইমেইল-এর বডিতেও একই হুমকির বার্তা লেখা ছিল। বিষয়টি সিটিটিসির প্রধান পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। হুমকির বিষয়টি জানানো হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের। এই সময়ে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় সফরে বিদেশে ছিলেন বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। হুমকির বার্তায় বলা হয়, ২৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভোর ৪টায় গুলি করা হবে। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি ডিএমপি ও পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জানানো হয়। বিদেশ সফরকালেই প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়।
আসাদুজ্জামান বলেন, ওই ঘটনায় দীর্ঘ তদন্ত ও সৌদি আরবে থাকা রাষ্ট্রদূত ও সাবেক আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারীর মাধ্যমে সৌদি সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়। এরপর দুজনকে শনাক্ত করে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশে পাঠানো হলে তাদের গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি।
আসাদুজ্জামান আরও বলেন, সিটিটিসি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের একটি চৌকস টিম গোপনীয় অনুসন্ধান এবং প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ শেষে ইমেইল বার্তা প্রেরণকারীকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় এবং হুমকি বার্তা প্রেরণকারী ব্যক্তির নাম দীন ইসলাম বাদল বলে নিশ্চিত হয়। হুমকি বার্তা প্রদানকারীর ইন্টারনেট (আইপি) অ্যাকটিভিটি পর্যালোচনা করে তার অবস্থান সৌদি আরবে বলে তদন্তে নিশ্চিত হয় তদন্ত টিম। একই ঘটনায় ২০ এপ্রিল ডিএমপি মিডিয়া পাবলিক রিলেশন সেন্টারের ইমেইলে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকিদাতাসহ অজ্ঞাতনামা সহযোগীদের বিরুদ্ধে রমনা মডেল থানায় মামলা করে সিটিটিসি। মামলা নম্বর-১৫। একই তারিখে মামলার আসামি এবং সহযোগিদের সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এনসিবি-ইন্টারপোল-এর মাধ্যমে এবং একই সঙ্গে ডিপ্লোমেটিক চ্যানেল ব্যবহার করে কার্যক্রম গ্রহণ করে সিটিটিসি।
দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর এবং সৌদি কর্তৃপক্ষ তদন্ত শেষে ২৯ জানুয়ারি সৌদি আরব সরকার প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকিদাতা দীন ইসলামকে তার সহযোগী কবির হোসেনসহ আটক করে বাংলাদেশে প্রেরণ করলে তাদের হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তারের সময় দীন ইসলামের কাছ থেকে হুমকি প্রদানকারী ইমেইল অ্যাড্রেসটির রিকভারী মোবাইল নম্বরটিসহ একটি মোবাইলফোন জব্দ করা হয়।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, ‘গত ১০ বছর ধরে সৌদিতে থাকা কবির হোসেন যুবদলের একাংশের সভাপতি। সৌদি যুবদলের নেতা দীন ইসলাম। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রীকে হুমকির উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ ২৭ বার হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে। যে কারণে এই হুমকিকেও গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য সন্দেহজনক। শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা বা হামলা করা হলে রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে, এটাই তাদের ছিল উদ্দেশ্য। তাদের সঙ্গে আরও কারো যোগসাজশ ছিল কিনা তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’