বান্দরবানের রুমা-থানচি দুটি উপজেলা সড়কে যাত্রীবাহী বাসসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। তারা সড়কে অবস্থান নিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে রেখেছে বলে দাবি পরিবহণ শ্রমিকদের। আজ রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে এ ঘটনা ঘটে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাড়ি বন্ধ রাখতে রুমায় পরিবহণের লাইনম্যান লুবপ্রু মারমাকে মারধর করেছে কেএনএফ সদস্যরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে রুমা ও থানচি উপজেলার জনসাধারণ। উপজেলাগুলোতে আটকা পড়েছে বেড়াতে আসা অসংখ্য পর্যটকও।

জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, রুমা উপজেলার রিজুকপাড়া এলাকায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারমা সম্প্রদায়ের যুবক উহ্লা চিং (৩৫) গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। ঘটনার পরের দিন রুমা বাজারে প্রতিবাদ কর্মসূচির পর  বম জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায় রিজুকপাড়ার মারমা জনগোষ্ঠী। এতে বম জনগোষ্ঠীর নেতা বোমাং সার্কেলের মৌজা প্রধান হেডম্যান থামখাম বমসহ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে বম জনগোষ্ঠীর সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ। বম জনগোষ্ঠীর ওপরে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তিন দিনের আলটিমেটাম দেয় কেএনএফ। তবে প্রশাসন সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগে আজ সকাল থেকে রুমা ও থানচি উপজেলায় বিভিন্ন সড়কে সশস্ত্র অবস্থান নিয়ে সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় কেএনএফ । এ সময় রুমা বাসস্টেশন এলাকায় গাড়ি বন্ধ রাখতে পরিবহণের লাইনম্যান লুবপ্রু মারমাকে মারধর করে কেএনএফ সদস্যরা। গুরুতর আহত অবস্থায় পরিবহণ শ্রমিককে বান্দরবান জেলা সদরে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে আন্তজেলা মোটর সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নূরুল আলম ও সুগন্ধা পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অমল দাস জানান, আজ সকাল থেকেই রুমা ও থানচি উপজেলা সড়কে যাত্রীবাহী বাসসহ সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। অভ্যন্তরীণ সংঘাতে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। লুবপ্রু মারমা নামে এক পরিবহণ শ্রমিককেও মারধর করা হয়েছে। যানবাহন বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে স্থানীয় জনসাধারণ ও বেড়াতে আসা পর্যটকরা। বিষয়টি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাজাহান জানান, সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে আজ সকাল থেকেই। জনসাধারণের নিরাপত্তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সড়কের মধ্যখানে আটকে থাকা কয়েকটি যানবাহনের যাত্রীদের পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন জানান, যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। আবাসিক হোটেল, পুলিশ ও স্থানীয় ট্যুর গাইডদের মাধ্যমে আটকাপড়া পর্যটকদের তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় পর্যটকদের নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া হবে। আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত যানবাহন চালু করতে কাজ করা হচ্ছে।