প্রতিবেশি দেশ আমাদের প্রতিনিয়ত ছোট করছে : রিজভী

আমাদের প্রতিবেশি দেশ প্রতিনিয়ত ছোট করছে মন্তব্য করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা করছে বিএসএফ, কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিবাদে একটু মাথা উঁচু করে কথাও বলতে পারে না। তাদের কাছে থেকে তিস্তার পানিসহ ন্যায্য অধিকার কিছু নে পেলেও প্রধানমন্ত্রী ভারতের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করতে পারেন না, গলা তুলে কথা বলতে পারেন না। শেখ হাসিনাকে পার্শ্ববর্তী দেশের প্রত্যেকটি আবদারই পূরণ করতে হয়।’
আজ শনিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে যুবদল ও ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের উদ্যোগে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন রিজভী।
‘সীমান্ত চুক্তির পরেও বাংলাদেশিদের হত্যা করছে ভারতের বিএসএফ। প্রতিদিন মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়, কিন্তু শেখ হাসিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিবাদ তো দূরে থাক, একটু মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী আপনি কী পেয়েছেন তাদের কাছ থেকে? সব দিয়েছেন কিন্তু ন্যায্য যে অধিকার তিস্তার পানি, গঙ্গার পানি সেটাও আপনি পাননি। তারপরও এত নতজানু কেন?’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ভারতের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করতে পারেন না, গলা তুলে কথা বলতে পারেন না। কিন্তু সাইফুল আলম নিরবরা কারাগারে থাকবে। যারাই আপনার গণতন্ত্রহীনতার, বাক স্বাধীনতার এবং অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলবে, তাদের ঠিকানা হবে কারাগার। কিন্তু আমাদের প্রতিবেশি দেশ প্রতিনিয়ত ছোট করছে, আমাদেরকে উইপোকার সঙ্গে তুলনা করছে, প্রধানমন্ত্রী তার কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না। শেখ হাসিনার নিশ্চুপ, কারণ শেখ হাসিনা একটি ডামি সরকার। তিনি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে ভয় পায়, জনগণের ভোটকে ভয় পায়। এই কারণেই তাকে একটি শক্ত খুঁটির সঙ্গে বেঁধে থাকতে হয়। তার সেই শক্ত খুঁটি হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এই শক্ত খুঁটির (ভারতের) কারণে তিনি (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশের মানুষকে ত্যাজ্য করেছেন, ভোটারদের ত্যাজ্য করেছেন, গণতন্ত্রকে ত্যায্য করেছেন, অবাক-সুষ্ঠু নির্বাচনকে ত্যাজ্য করেছেন। এক বেআইনি অবৈধ সরকার দেশের সমস্ত বিরোধী দল, সমস্ত গণতন্ত্রকামী মানুষকে কারাগারে ঢুকিয়ে রেখে তিনি সম্রাজ্ঞীর মতো দেশ শাসন করতে চাচ্ছেন। জনগণ শূন্য, ভোটার শূন্য, গণতন্ত্র শূন্য—এমন একটি নির্দয় ফ্যাসিবাদী শাসন তিনি কায়েম করতে চান।’
রিজভী বলেন, ‘গোটা জাতির যিনি প্রতীক, যিনি এ দেশের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, নিজের জীবনকে বিপন্ন করে তিনি আজও বন্দি কোনো কারণ ছাড়া, শুধু শেখ হাসিনার প্রতিহিংসার কারণে। ওয়ান ইলেভেনের সরকারকে আপনি কী বলেছিলেন, আপনি বলেছিলেন–আপনার আন্দোলনের ফসল। সেই সরকার আপনার নামে ১৫টি মামলা দিয়েছিল। ওই মামলাগুলো গেল কোথায়? সেই মামলাগুলো কি হাওয়া হয়ে উড়ে গেল? ওই মামলাগুলোতে যদি আপনার প্রত্যেকটিতে সাজা হতো তাহলে মিনিমাম ২০০ বছর হতো, যদি দেশে ন্যায়বিচার থাকতে। কিন্তু আপনার ক্ষমতার কারণে আপনি আদালতের মালিক, প্রশাসনের মালিক, আপনি পুলিশের মালিক, আপনি কারাগারের মালিক, আপনি যখন যাকে ইচ্ছা তাকে আটকে রাখতে পারেন, তখন তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে প্রহসনের বিচার করতে পারেন, সেই প্রহসনের বিচারে আমাদের প্রিয় নেত্রী বন্দি। কারণ, তিনি (শেখ হাসিনা) তার পথের কাঁটা পরিষ্কার রাখতে চান।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আজ জাতীয় রিজার্ভ ১৭ বিলিয়ন ডলার, যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বলা হচ্ছে ১৯ বিলিয়ন। কিন্তু আইএমএফের গোপনে রিপোর্টে বলা হচ্ছে ১৭ বিলিয়ন ডলার। তিন মাসে যে আমদানি করবেন, সেই আমদানি করার ক্ষমতা বাংলাদেশের এখন আর নেই। বাংলাদেশের মানুষ না খেয়ে থাকবে, খেতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর দিকে তাকিয়ে থাকলে পেট ভরবে? এই যে দেশে অভাব-অনটন আসছে, আপনি এর প্রতিবাদ করতে যাবেন, আপনাকে কারাগারে যেতে হবে। নির্যাতনের শিকার হতে হবে।’
রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনার ভারতের সঙ্গে এত প্রেম, এত মহব্বত ব্রিক্সের সদস্য হওয়ার জন্য ভারত বাংলাদেশকে নিয়ে কোনো কথাই বলেনি। মানুষ এটাও মনে করে, ভারত কথা বললেই বাংলাদেশ সদস্য হতে পারত। শুধু অপমান ও লাঞ্ছনা ছাড়া আপনি কী পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী?’
যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি মুর্তাজুল করিম বাদরুর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও যুবদলের সাবেক সহসভাপতি এস এম জাহাঙ্গীরসহ অন্যান্যরা বক্তব্য দেন।