সারাদেশে গাছ কাটতে সরকারের তৈরি কমিটির অনুমতি লাগবে : হাইকোর্ট
সারাদেশে সরকারের তৈরি কমিটির অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা যাবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ের আলোকে সারাদেশে গাছ রক্ষায় সাত দিনের মধ্যে একটি কমিটি গঠন করতে হবে সরকারকে।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
হাইকোর্ট বলেন, দেশে দিনদিন তাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় গাছ সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। ব্যাপকভাবে গাছ কাটা হলে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। এতে আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার খর্ব হবে।
আদালত আরও বলেন, পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য যে পরিমাণ গাছ বাংলাদেশে থাকা দরকার সে পরিমাণ গাছ নেই ও এই গাছগুলোকে রক্ষা করা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ, তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট সঞ্জয় মন্ডল ও অ্যাডভোকেট সেলিম রেজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডি এ জি মো. শফিকুর রহমান, মাহফুজ বিন ইউসুফ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবীর রোমেল।
অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘সারা দেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও পরিবেশ দূষণ বন্ধ করে মানুষের জীবন ও সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য জনস্বার্থে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন এইচআরপিবি ২০২৪ সালে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন।’
ওই রিট পিটিশন শুনানি শেষে ২০২৪ সালের ৭ মে আদালত বিবাদীদের প্রতি, ‘ঢাকার দুই সিটি, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গাছ কাটা কেন মানবাধিকারের পরিপন্থি হবে না এবং সামাজিক বনায়ন বিধিমালা ২০০৪ অনুযায়ী বপনকৃত গাছ না কেটে বরং ওই গাছের মূল্যের সমপরিমাণ টাকা কেন বপনকৃত ব্যক্তিদের দেওয়া হবে না এবং গাছ কাটতে হলে সব পর্যায়ে কেন সাত সদস্যের কমিটির কাছে অনুমোদন নিতে হবে না’ এই মর্মে রুল জারি করা হয়। সেই রুলে শুনানি শেষে হাইকোর্ট আজ এ নির্দেশনা দিয়েছেন।
অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশে দিনদিন গাছ কাটার মাত্রা বাড়ছে। একটি দেশে যে পরিমাণ গাছ থাকা দরকার সেই পরিমাণ গাছ বাংলাদেশ নেই। আর এর মধ্যে আরও বেশি গাছ কাটা হয়, তাহলে তা হবে পরিবেশের জন্য হুমকির সমান। এই কারণে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে লাগানো গাছ না কেটে বরং যারা গাছ বপন করেছে তাদের গাছের মূল্য পরিশোধ করা উচিত। গাছ কাটা নিয়ন্ত্রণের জন্য ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অনুমতি একটি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা এবং তাদের কাছ থেকে গাছ কাটার অনুমতি দেওয়ার নির্দেশনা প্রার্থনা করেন।’
সাত দিনের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরকে গাছ কাটার অনুমতি নেওয়ার জন্য পরিবেশবাদী, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপকদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে সাত দিনের মধ্যে একটি সার্কুলার ইস্যু করে জেলা প্রশাসক, জেলা পরিবেশ কর্মকর্তা, সরকারি কলেজের অধ্যাপক, সমাজকর্মী, পরিবেশবিদ ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা সিভিল সার্জনকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে, যারা জেলা পর্যায়ের গাছ কাটার অনুমতি প্রদান করবেন।
আদালত আরও একটি আদেশে জনপ্রশাসন সচিবকে আগামী সাত দিনের মধ্যে সব জেলা প্রশাসকদের প্রতি একটি সার্কুলার ইস্যু করে উপজেলা পর্যায়ে গাছ কাটার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কলেজের অধ্যক্ষ, সমাজকর্মী, পরিবেশবাদী, সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা, এসি ল্যান্ড ও এলজিইডির নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ারদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়, যারা উপজেলা পর্যায়ের গাছ কাটা সম্পর্কে অনুমতি দেবে।
এ ছাড়া রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়, সামাজিক বনায়ন বিধিমালা ২০০৪ এর অধীনের রোপণ করা গাছগুলো কাটা যাবে না। বরং গাছের সমমূল্যে টাকা রোপণকারীকে দিতে হবে। এই মর্মে সামাজিক বনায়ন বিধিমালায় পরিবর্তন আনয়নেরও নির্দেশনা দেন।