তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু
গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপ। গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় লাখো মুসল্লির উপস্থিতিতে আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা। আগামী রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এই ধাপের ইজতেমা শেষ হবে। এ উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে গাজীপুর মহানগর পুলিশ, র্যাব ও জেলা প্রশাসন।
ইজতেমার আয়োজক শুরায়ে নেজামের মুখপাত্র হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা ‘ঈমান ও আমলের’ ওপর বয়ান করেন। এর মধ্য দিয়েই শুরু হয় ইজতেমার প্রথম ধাপ। আজ শুক্রবার বাদ ফজর থেকে বয়ান করছেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়া উল হক। ইতোমধ্যে ৭২টি দেশের দুই সহস্রাধিক বিদেশি মেহমান ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। আজ শুক্রবার আরও বিদেশি মেহমান ময়দানে এসে পৌঁছাবেন।
মাওলানা জিয়া উল হক ঈমান, আমল ও আখলাকের ওপর বয়ান করেন। বয়ানে তিনি আখেরাতে শান্তির জন্য দুনিয়াতে করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরেন। এ ছাড়া কীভাবে মানুষ ইসলামের পথে থাকা যায় এবং কীভাবে হেদায়েত পাওয়া যায়, সে বিষয়গুলো আলোচনা করেন তিনি। তার বয়ান অনুবাদ করেন মাওলানা নুরুর রহমান। মুসল্লিরা নিজ নিজ খিত্তায় অবস্থান করে বয়ান শুনছেন। আজ শুক্রবার ইজতেমা ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে জুমার বৃহত্তর জামাত। এতে ইমামতি করবেন বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়ের। গাজীপুরের টঙ্গী ও আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকে নামাজে যোগদানের জন্য বিপুল মুসল্লি অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বয়ানের পর বিভিন্ন খিত্তায় খিত্তায় তালিমের আমল হবে। তাবলীগের উসুলের মধ্যে কালেমা, নামাজ, এলেম শিক্ষা, জিকির, একরামুল মোমেনীন, সহি নিয়ত ও দাওয়াতে তাবলীগের পাশাপাশি তাবলীগের ৭২টি নজমের বিষয়েও মুসল্লিদের অবগত করা হয়।
মুখপাত্র হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, এবার তারা দুই ধাপে ইজতেমা করবেন। এর মধ্যে আজ ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হবে প্রথম ধাপের ইজতেমা। এই ধাপে অংশ নেবেন ৪১ জেলা ও ঢাকার একাংশের মুসল্লিরা। এরপর আগামী ৩ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা। এই ধাপে অংশ নেবেন ২২ জেলা ও ঢাকার অন্য অংশের মুসল্লিরা। প্রথম পর্ব দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হওয়ার পর আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা। সেই পর্বে অংশ নেবেন দিল্লির তাবলিগ জামাতের মুরুব্বি মাওলানা সাদের অনুসারীরা। ১৬ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা।
ইজতেমায় আগত মুসল্লিরা জানান, ঈমান-আমল এবং আকিদাকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ করাই মুসল্লিদের উদ্দেশ্য। তিন দিনের ইজতেমায় কুরআন হাদিসের আলোকে যে বয়ান হবে, এগুলো শুনে তাবলিগের অভ্যন্তরীণ দ্বিধা-দ্বন্দ্ব অনেকটাই কেটে যাবে বলে তাদের প্রত্যাশা।
ঈমান ও আমলের মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন বলে জানান বিদেশ থেকে আগত মুসল্লিরা। পাকিস্তান থেকে আগত করিম খান জানান, ঈমান, আমল ও আখলাক যদি ঠিক থাকে মহান আল্লাহ তায়ালার রহমত পাওয়া সহজ হবে। তাই ইজতেমায় আগত প্রত্যেক মুসল্লি বয়ান শুনবেন এবং সে মোতাবেক আমল করে মহান আল্লাহতালাকে রাজি খুশি রাখবেন। এবার ইজতেমা আয়োজনে তারা সন্তুষ্ট। এখানে থাকা-খাওয়া, চলা সবকিছু মিলে পরিপূর্ণ আয়োজন হয়েছে বলে তিনি জানান।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. মোহাম্মদ নাজমুল করিম খান জানিয়েছেন, এবারের বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা অন্য বছরে তুলনায় কঠোর করা হয়েছে। তাবলিগ জামাতের দুই গ্রুপের বিভিন্ন সময়ে দ্বন্দ্ব, সংঘর্ষ এবং নানামুখী প্রচারণার কারণে এবার ময়দানজুড়ে পোশাকে-সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেকটাই কঠোর করা হয়েছে। ময়দানজুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।