এ মাসেই ছাত্রদের নতুন দল ঘোষণা
রাজনীতির মাঠে নানা তর্ক-বির্তকের মধ্যে ছাত্ররা নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণা দিতে যাচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত দলের নাম কী হচ্ছে, দলীয় গঠন, কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে। চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসেই নতুন দলের ঘোষণা আসছে বলে জানা গেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সমন্বয়ে নতুন এ রাজনৈতিক দল গঠন হতে যাচ্ছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। সরকার পতনের পর থেকেই নতুন দল গঠন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। যা সাত মাসের মাথায় ঘোষণা আসতে যাচ্ছে।
অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয় শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অন্যদিকে অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে দেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে গত সেপ্টেম্বরে যাত্রা শুরু করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। তারা প্রথম কমিটি করে গত বছরের ৮ নভেম্বর। এর পর থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৫৭টি থানা ও উপজেলায় প্রতিনিধি কমিটি করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। সব মিলিয়ে সারা দেশে তাদের প্রতিনিধির সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রথম কমিটি করে গত ২ নভেম্বর। এর পর থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের ৩০টি জেলা, ৫টি মহানগর, ৮টি থানা, দুটি বিশ্ববিদ্যালয়, তিনটি কলেজ ও একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন কমিটিতে তাদের সদস্য রয়েছে প্রায় সাড়ে আট হাজার।
ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে আলোচনা শুরু হলে বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলো স্বাগত জানালেও এই নিয়ে সরকারের কড়া সমালোচনা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। তারা বলছেন, সরকারের ছত্রছায়ায় নতুন রাজনৈতিক দল গঠন হলে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে দেশের মানুষ।
জাতীয় নাগরিক কমিটির দায়িত্বশীল এক নেতা এনটিভি অনলাইনকে জানান, আমাদের কর্মসূচি চলমান আছে। আমরা আলাপ-আলোচনা করছি। জনগণের মতামত নেওয়া হচ্ছে। সব কিছু বিচার বিশ্লেষণ করে দলের নাম, গঠনতন্ত্র ও কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি অথবা শেষ দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সমন্বয়ে নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ঘোষণা করা হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের একজন তরুণ উপদেষ্টা পদত্যাগ করে নতুন এই দলের দায়িত্ব নিতে পারেন বলেও আলোচনা আছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, নতুন দলটি আদর্শগতভাবে মধ্যপন্থি ধারার হবে। দলের নাম কী হবে, সে বিষয়ে বেশ কিছু প্রস্তাব তাঁরা পেয়েছেন। তবে এখনো কোনো নাম চূড়ান্ত হয়নি। দলের প্রতীক কী হবে, সেটি নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক আলোচনা অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে যে তিনজন উপদেষ্টা (মাহফুজ আলম, নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ) আছেন, তাঁদের মধ্যে একজন পদত্যাগ করে দলের নেতৃত্ব নেবেন। অন্য দুজন আরও পরে সুবিধাজনক সময়ে পদত্যাগ করে দলে যোগ দিতে পারেন। ওই দুজনের একজন আগামী জুন মাসে উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দলে যোগ দিতে পারেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন জানান, ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে তাদের রাজনৈতিক দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে। দলটি ডান ও বাম ধারার বাইরে জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে মধ্যপন্থী দল হিসেবে রাজনীতি করবে। গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে ছিলেন; কিন্তু কোনো দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন—এমন ব্যক্তিদের তাঁরা নতুন দলে নিয়ে আসতে চান।
দলের নাম, নেতৃত্ব, আত্মপ্রকাশের নির্দিষ্ট তারিখ বা কোথায় ও কীভাবে আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেওয়া হবে, সেগুলো নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে বলে জানান আখতার হোসেন।
আখতার হোসেন বলেন, শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে আমরা জনমত যাচাই করার চেষ্টা করছি। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে থাকা ছাত্র উপদেষ্টাদের নাম এ ক্ষেত্রে আলোচনায় রয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আবার তাঁরা পদত্যাগ করলে সরকারে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বটা কীভাবে থাকবে, সেই আলোচনাও হচ্ছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সহ-মুখপাত্র সালেহ উদ্দিন সিফাত এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তরুণদের মধ্যে যে রাজনৈতিক সচেতনতা ও আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, তা বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো ধারণ করতে পারছে না। ফলে একটা তরুণদের এই নব আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে এমন একটি রাজনৈতিক দল প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং অভাবনীয় সাড়া পাচ্ছি। আইনজীবী, প্রকৌশলী, ডাক্তার থেকে শুরু করে রিকশাশ্রমিক, পোশাকশ্রমিক; দলিত-হরিজনের মতো আন্ডার রিপ্রেজেন্টেড কমিউনিটির নাগরিকগণ আমাদের সাথে সংযুক্ত হচ্ছেন। ইতোমধ্যে প্রায় আড়াইশ থানায় আমাদের প্রতিনিধি কমিটি গঠিত হয়েছে।
সালেহ উদ্দিন সিফাত বলেন, আমরা মনে করি, নির্বাচন সংস্কার প্রক্রিয়ারই একটি অংশ। সংস্কারকে নির্বাচনের মুখোমুখি দাঁড় করানোটা ঠিক না। আমরা নির্বাচন চাই, তবে সেটি হতে হবে গণপরিষদ নির্বাচন৷ গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন সংবিধান প্রণয়নের পর গণপরিষদই আইনসভায় রূপ নিবে। এমনটাই আমাদের প্রস্তাব।