আন্দোলনে গুরুতর আহতদের কয়েকশ কোটি টাকা দিতে হয়েছে : অর্থ উপদেষ্টা
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/09/dd._saalehuddin_aahmed.jpg)
বছরের শুরুতে বিভিন্ন পণ্যের ভ্যাট বাড়ানোর কারণ হিসেবে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যারা গুরুতর আহত তাদের ৩৫ লাখ টাকা করে কয়েকশ কোটি টাকা দিতে হয়েছে। পুলিশের ৩০০ গাড়ি পোড়ানো হয়েছে, সেখানে ৫০০ কোটি টাকা দিতে হবে। এইগুলো আমি কোথা থেকে পাব? ভ্যাট হলে দ্রুত করা যায়, সেটা আমি করেছি।’
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের ভূমিকা’শীর্ষক মতবিনিময় সভায় অর্থ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
বিএসআরএফ সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক মতবিনিময় সভা সঞ্চালনা করেন। এতে সভাপতিত্বে করেন সংগঠনের সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাব।
বাজেটের মাধ্যমে ভ্যাট না বাড়িয়ে বছরের শুরুতে ভ্যাট বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাকে অনেক টাকা দিতে হয়েছে। যেমন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যারা আহত তাদের ৩৫ লাখ টাকা করে কয়েকশ কোটি টাকা দিতে হয়েছে। পুলিশের ৩০০ গাড়ি পুড়িয়েছে, সেখানে ৫০০ কোটি টাকা দিতে হবে। এই টাকাগুলো আমি কোথা থেকে দেবো? ভ্যাট হলো দ্রুত করা যায়, সেটা আমি করেছি। তারপর অনেকগুলোতে কমিয়ে দিয়েছি।’
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘আমার রিসোর্স গ্যাপ অনেক বেশি। এজন্য আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি—এদের সহায়তা নিতে হয়েছে। আমাদের ঋণ শোধ করতে হয়, কোনোদিন ডিফল্টার হয়নি। আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তারা আমাদের সাহায্য করছে। আমরা খুড়ের ওপর দিয়ে হাঁটছি। চেষ্টা করছি, বলবো না যে আমরা খুব ভালো করছি। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা খারাপ নেই। আমরা মোটামুটি ভালো আছি। অবশ্যই আমরা একটা কল্যাণমুখী, সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র করার চেষ্টা করছি। তবে সেটা অনেক দূরে। সেটা পলিটিক্যাল সরকার করবে।’
আর এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংক থেকে অর্থ আনতে অর্থনীতির কতগুলো শর্ত মানতে হবে। আমরা কখনো শর্তে ফেইল করিনি। এই বিষয়ে তাদের সাথে অনেক আলোচনা হয়েছে। তারা বলেন ভ্যাট বাড়াও, ভ্যাট বাড়িয়ে নানা রকম বিপত্তি হয়েছে। এগুলো খুব সেনসিটিভ, এক দুই টাকা বাড়ানো মানে প্রবাসীদের জন্য না, আমাদের এখন আমদানিকারক আছে, নানা রকম অবলিগেশন আছে। যতো কিছু আমদানি করছে সেগুলোর দাম বেড়ে যাবে।’
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জনগণের এখতিয়ার মানে রাজনৈতিক সাপোর্ট। আমরা কিন্তু ক্ষমতায় আসিনি, আমাদেরকে দেওয়া হয়েছে। আমরা যেটা করছি, কিছু কিছু কারণ আছে, সব কিছু ভেবেচিন্তে করছি। এখানে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা আছে, এখানে রাজনৈতিক ব্যাপার আছে। তাহলে কীভাবে আমরা রাজস্ব ব্যয় কমাব। এক্ষেত্রে আমি পজেটিভ।’
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের প্রবাসীরা ব্যবসা করতে চায় না। তবে ব্যবসা করা কঠিন। সবকিছু তো আমরা করে দেব না। সরকারের আয়-ব্যয়ে ব্যালেন্স করতে হয়। সেটা সবসময় যুক্তিসঙ্গত হবে, তা কিন্তু না। ট্যাক্সের ক্ষেত্রে আপনি দেবেন, লাভবান আপনি হবেন। আমরা চাই, একেবারেই সাধারণ মানুষ যাতে লাভবান হয়। এখন শিক্ষকদের অনেক ডিমান্ড আছে, সেটা আমরা বিচার বিশ্লেষণ করে দেখবো।’
‘প্রতিদিন যে তারা রাস্তাঘাট আটকে রাখে, এটা সত্য যে আমরা অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক সরকারের মতো শক্তিশালী না। এখন যদি মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়, তখন দোকানদাররা দোষ দেওয়া শুরু করে। এটা সত্য আমরা অনেক চাপের মধ্যে আছি। ১০০টা চাপের মধ্যে আমরা ১০টা মানি। এ যেমন রেলওয়ের ডিমান্ড, ওভার টাইম দাও, দিলাম। এরপর বলে লিমিট উঠিয়ে দাও, সেটাও উঠিয়ে দিলাম। কয়েক দিন পর বলবে চাকরি থাকবে না বেতন দাও? তখন আমি কি করবো? সেটা নিয়ে চিন্তায় আছি।’
ভ্যাট বাড়ানোর পর চপ্পলের দাম বেড়েছে সেটা নিয়ে কিছু মেয়েরা প্রতিবাদ করেছেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘ভ্যাটের একটা .... থাকে, সেখানে সস্তা চপ্পলে যদি ভ্যাট থাকে, সেটা আমি রিভিউ করবো। যেমন, ২০০ টাকা দামের ওপরে বিস্কুটে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এইচএস কোড থাকে সেখানে অনেকগুলো পণ্য থাকে। সেখানে যদি চপ্পল থাকে তাহলে একটু সমস্যা।’
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, আমি যে এতো টাকা পয়সা আনছি, এডিবি ডিসেম্বর ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেবে, জুনে বিশ্বব্যাংক ৫০০ মিলিয়ন দেবে এবং আইএমএফ মার্চে না হয় জুনে ২ বিলিয়ন ডলার দেবে। তাদের কতগুলো শর্ত আছে। যেমন ট্যাক্স, ভ্যাট বাড়ানোর। সেখানে আমি যৌক্তিকভাবে দেখলাম যে আয়কর বাড়ালে সংসদে যেতে হবে। আর যদি ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়াই, তাহলে একটি এসআরও দিয়ে আমি করতে পারব। এখানে কিন্তু বেশি টাকা না। মাত্র ১২ হাজার কোটি টাকা। এতে কিছু প্রভাব পড়েছে ঠিক।
বক্তব্যের শুরুতে উপদেষ্টা বলেন, ভ্যাট বাড়িয়েছি, সেটা নিয়ে বহু কথাবার্তা হচ্ছে। এখনো হচ্ছে। কিছু কিছু ভুল তো হয়। কিছু কিছু আড়ালে চলে যায়। তখন আপনারা বলেন, আমরা চেষ্টা করি, সেটা করার জন্য। একটা জিনিস মনে রাখবেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কাজ সব সময় পপুলার ডিমান্ডে করা যায় না। এটা আপনারা লক্ষ্য করেছেন। আমাকে এখন অনেক অর্থনীতিবিদ বলছেন সব ট্যাক্স কমিয়ে দেন, ভ্যাট কমিয়ে দেন। রাজস্ব বাড়ান। অনেকের দুঃখ আমি রাগি। তারা বলেন এই অর্থ উপদেষ্টা আমরা এতোগুলো কথা বার্তা বললাম বাস্তবায়ন তো কিছু হচ্ছে না। বাস্তবায়ন যে হচ্ছে না, তা নয়।