শশীর আলোয় উদ্ভাসিত ইকে ইউ উচ্চবিদ্যালয়ের শতবর্ষে প্রাক্তনীদের মিলনমেলা
দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত হলো গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার অন্যতম প্রাচীন বিদ্যাপীঠ পূর্ব কোটালীপাড়া ইউনিয়ন (ইকে ইউ) উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বেলুন উড়িয়ে শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ পুলিশের (সিআইডি) অতিরিক্ত ডিআইজি মোসা. সিদ্দিকা বেগম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান। তিনি অসুস্থতাজনিত কারণে আসতে না পারায় তার পরিবর্তে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. গোলাম কবির উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন।

শতবর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. শুকদেব চন্দ্র মজুমদারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য দেন এই বিদ্যালয়ের সাবেক কৃতি শিক্ষার্থী ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রিসার্চ অনুবিভাগের মহাপরিচালক, কথাসাহিত্যিক অরুণ কুমার বিশ্বাস। বিশেষ বক্তা ছিলেন বেনাপোল কাস্টম হাউজের যুগ্ম কমিশনার সুশান্ত পাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। তিনিও আসতে না পারায় তার পরিবর্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মাহবুবুল আলম বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন। এসময় আরও বক্তব্য দেন বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাগুফতা হক। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শতবর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ইকে ইউ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বনোজ কুমার মজুমদার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক প্রশান্ত অধিকারী।
আলোচনা সভা শেষে বিদ্যালয়টির কৃতি শিক্ষার্থী, সাবেক শিক্ষক ও অতিথিদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়। এর আগে অতিথিবৃন্দ বিদ্যালয়টির শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন।

বিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থী ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রিসার্চ অনুবিভাগের মহাপরিচালক অরুণ কুমার বিশ্বাস বলেন, আজ থেকে শত বছর আগে শিক্ষানুরাগী শশীভূষণ মধু আমাদের প্রত্যন্ত এই অঞ্চলে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর শত বছরের অভিযাত্রা। আমরা এই বিদ্যালয় থেকে অনেকেই লেখাপড়া করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছি। কিন্তু আমরা আমাদের শিকড়কে ভুলে যাইনি। আজকে একটি বিশেষ দিনে আমরা সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা এক সঙ্গে মিলিত হয়েছি। এই দিনটি আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
অনুষ্ঠানটির দ্বিতীয় পর্বে হয় সাবেক শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ। এসময় বিবেকানন্দ ঢালী, জিতেন্দ্র নাথ রায়, বঙ্কিম চন্দ্র বিশ্বাস, অনিল চন্দ্র মধু, রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস, কুমুদরঞ্জন বালাসহ প্রমুখ সাবেক শিক্ষার্থীরা স্মৃতিচারণ করেন।
বিবেকানন্দ ঢালী বলেন, আমি অত্র বিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করি। পরবর্তীতে এখানেই শিক্ষক হিসেবে যোগ দেই। প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসর গ্রহণ করি। এই বিদ্যালয়ের শতবর্ষ অনুষ্ঠানটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। আজ এই অনুষ্ঠান আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। অনেক পুরোনো বন্ধুদের সাথে কয়েক যুগ পর দেখা হলো। সকলেই যেন শৈশব-কৈশোরে ফিরে গেলাম। এরপর বরেণ্যে সংগীতশিল্পীদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।

প্রসঙ্গত, ১৯২৫ সালের ১ জানুয়ারি রামশীল ইউনিয়নের জহরেরকান্দি গ্রামে বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও সমাজহিতৈষী শশীভূষণ মধু পূর্ব কোটালীপাড়া ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। দেশভাগ তথা বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই বিদ্যালয়ে অনেক গুণী মানুষ লেখাপড়া করেছেন। যাঁরা কোটালীপাড়ার ভৌগোলিক সীমানা পেরিয়ে জাতীয় পরিচয়ে পরিচিতি পেয়ে, অগ্রগণ্য ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন।