সুষ্ঠু নির্বাচন হলে গোপালগঞ্জের মানুষও নৌকায় ভোট দেবে না : রিপন

বিএনপির সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামান খান রিপন বলেছেন, আমরা দেশের সাধারণ মানুষের ভোটের জন্য আন্দোলন করছি দেশে গণতান্ত্রিকভাবে সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরকার নির্বাচিত করতে চায়। এজন্য উচিৎ হবে এই সরকারকে ধানাই পানাই পথ না ভাবার জন্য।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণাসহ নানান দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার দুপুরে (২৪ ফেব্রুয়ারি) গোপালগঞ্জের পৌর মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান খান রিপন এ সব কথা বলেন।
আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, কোন কোন উপদেষ্টা বলেন, আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, আগে ছাত্র সংসদ নির্বাচন, তারপর হবে জাতীয় নির্বাচন। আবার কোন কোন দল বলছে শেখ হাসিনার বিচার করতে হবে, আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে। বিচার করতে কত বছর লাগবে? আওয়ামী লীগের আমলে দেখেছি জামায়াতের নেতাদের ফাঁসি দিয়েছে। তথাকথিত প্রহসনের বিচার করতে বছরের পর বছর সময় নিয়েছে। ৭৫ সালের ১৫ আগস্টে শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেই হত্যাকাণ্ডের পরে যাদেরকে তিনি (শেখ হাসিনা) মনে করেছেন তার পিতার হত্যার জন্য দায়ী তাদেরকে ফাঁসি দিয়েছেন বিচারিক প্রক্রিয়ায় বহু বছর পরে। আমরা কি বিচারের পরে নির্বাচনের জন্য আগামী পাঁচ বছর দশ বছর অপেক্ষা করব? এমনি তো পারেন না।
দেশে একটি নির্বাচিত সরকার না থাকার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এক ধরনের অবনতি ঘটেছে উল্লেখ করে বিএনপির এ সহ-সভাপতি রিপন বলেন, এখানে কোন মালিক নেই, যে যার মতো ফ্রি স্টাইলে চলছে। সকালে টেম্পু লীগ, দুপুরে ঠেলা লীগ নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান এখন শাহবাগে নানান জায়গায় এ দাবি, সে দাবিতে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছে সরকারকে। সেজন্য দেশে একটা দায়িত্বশীল জনগণের সরকার ও কর্তৃত্বশীল সরকার দেশে দরকার। যার নির্দেশ সরকারি কর্মকর্তারা মানতে বাধ্য হবে।
আসাদুজ্জামান রিপন আরও বলেন, একজন উপদেষ্টা বলেছেন যারা রাতে ভোট দিয়েছেন সে সকল ডিসিদের চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হবে, পুলিশদের ধরা হবে। এতদিন লাগে নাকি? ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে কোন এসপি সাহেব কোন ওসি সাহেবরা রাতের ভোটে এমপি বানিয়েছেন, ব্যালট বাক্স ভরেছেন জানেন না? ১৮ সালের ১৪ সালের এসপি যারা যেখানে আছেন তাদেরকে এখন পর্যন্ত বসিয়ে রেখেছেন কেন? তাদেরকে এখনই বাতিল করতে হবে, চাকরি থেকে বাদ দিতে হবে। স্বৈরাচারের ভূত সরকারের মধ্যে রেখে গণতন্ত্র কায়েম করা যায় না। এজন্য ওই সমস্ত ওসি ও এসপি যে যেখানে ছিলেন তাদেরকে যারা সাহায্য করেছেন তাদেরকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করতে হবে। সরকার পুলিশ সাহেবদের পিপিএম, বিপিএম পদক দেয়। যতগুলো পিপিএম, বিপিএম পদ দেওয়া হয়েছে অধিকাংশই দেখবেন খুন, ডাকাতি, চুরি, ধর্ষণ ও অন্যের বউ হাইজ্যাক করতে অভ্যস্ত। ভালো অফিসার পিপিএম ও বিপিএম খুব কম পেয়েছে। সুতরাং শেখ হাসিনার আমলে যত পিপিএম বিপিএম দেওয়া হয়েছে সকল পদক বাতিল করতে হবে। এই পদক নেওয়ার অধিকার বেনজীর ও তার মতো লোকের নেওয়ার অধিকার নেই।
একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে আসাদুজ্জামান আরও বলেন, সুন্দর ও একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমাদের রাজনীতিকে সুন্দর করতে হবে। হানাহানি ভেদাভেদ রাখা যাবে না। কক্সবাজারে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ঘাঁটিতে হামলার ঘটনা অস্বাভাবিক। এখন তো দেশে সরকার আছে। খোদ বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে। পাকিস্তানে মাঝেমধ্যে হামলা হয়। সেখানে রাষ্ট্র অকার্যকর। সেখানে গণতন্ত্র কাজ করে না। সেই পাকিস্তানে আমরা মাঝেমধ্যে দেখি সেখানে বিমানবাহিনীসহ নানাঘাঁটিতে হামলা হয়, বোমা ফাটায়। কিন্তু সেই আলামত বাংলাদেশে কেন? তার কারণ হচ্ছে বাংলাদেশে যাতে দ্রুত নির্বাচন না হয়। নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু সেই ষড়যন্ত্রকে আমরা রুখে দিতে চাই। আমরা যদি একটি ফ্যাসিবাদি সরকারকে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারি, তাহলে কী ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে পারবো না? অবশ্যই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে পারব। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে সকল শক্তি, সকল রাজনৈতিক দল, সকল শিক্ষার্থী, সংগঠন সবাই মিলে ৫ আগস্ট সৃষ্টি করেছিলাম। ১৬ বছর ধরে নিরন্তর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট প্রাথমিক বিজয় অর্জন করেছি। সেই অর্জনের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী শক্তি পালিয়েছে। তাদের পতন ঘটেছে। কিন্তু তাদের দোসররা এখনো নানান জায়গায় আছে।
গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিক উজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। বিশেষ বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি ফরিদপুর বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল আবেদিন মেজবাহ।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি হাসিবুল হাসান সজিব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান তাজ, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মঈনুল ইসলাম হিটু, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি সরদার নুরুজ্জামান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাগর মজুমদার, গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এফ ই শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীর, এম এইচ খান মঞ্জু, এম সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান পিনু, জেলা বিএনপিনেতা ও পিপি অ্যাডভোকেট কাজী আবুল খায়ের, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ডা. কে এম বাবর, সদস্য অ্যাডভোকেট তৌফিকুল ইসলাম, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিকদার শহিদুল ইসলাম লেলিন, জেলা যুবদলের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন লিপটন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন হিরা, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মিকাইল হোসেন, সহ-সভাপতি ইমরুল হাসানসহ বিএনপি ও সহযোগী অংগসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
দীর্ঘ ২১ বছর পর গোপালগঞ্জে বিএনপির জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত সমাবেশে সকাল থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জেলার সকল উপজেলা থেকে মিছিল নিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমানের ছবি সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন ও প্লাকার্ড হাতে দলে দলে সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হন বিএনপি ও তার সহযোগী সকল সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। কানায় কানায় পূর্ণ হয় সমাবেশ স্থল।