প্রাচীন ও দুর্লভ জিনিসে ভরপুর আজাদের ব্যতিক্রমী ‘জাদুঘর’

কয়েকটি পিতলের পাত্রে ভরা ধনদৌলত। সেগুলো পাহারা দিচ্ছে দুটি বিষধর সাপ। লোভে পরে কেউ হাত বাড়ালে আর রক্ষা নেই। কল্পকাহিনির অনুকরণেই সাজানো এই সংগ্রহশালা। তবে পাত্র ভরা দামি জিনিস থাকলেও সাপগুলো প্লাস্টিকের। সেটার নাম দেওয়া হয়েছে রত্নভাণ্ডার। এই রত্নভাণ্ডার ছাড়াও নানা দুর্লভ জিনিসের সংগ্রহ রয়েছে সেখানে। আছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ধাতব মুদ্রাসহ ১৭৬ দেশের মুদ্রা, ১৩০ বছর আগের কাঠের খড়ম, ১৭০ বছর আগের কাঠের ঢেঁকি, ১৯০ বছর আগের রুপার তৈরি মজার বিছাসহ প্রায় ২ হাজার প্রাচীন নিদর্শন। এসব কিছুই দেখা যাবে প্রীতম-প্রিয়ন্তি সংগ্রহশালায়। শখের বসে এমন প্রাচীন ও দুর্লভ জিনিসের সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছেন নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভার তালুকদারপাড়ার আবুল কালাম আজাদ তালুকদার।
যে কারও নজর কাড়বে ব্যক্তি উদ্যোগে এমন একটি ব্যতিক্রমী সংগ্রহশালা দেখে। নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভার চাঁচকৈড় তালুকদারপাড়ায় আবুল কালাম আজাদের বাড়ির একটি ঘরের তিনটি কক্ষজুড়ে জাদুঘরের অবস্থান। সেই ঘর ছাড়াও লম্বা বারান্দায় সাজানো রয়েছে নিদর্শনগুলো। কক্ষে ঢুকতেই দেখা গেল রত্নভাণ্ডারটি। প্লাস্টিকের যন্ত্র দিয়ে তৈরি চিড়িয়াখানা, পোকামাকড়ের ঘরবসতি, ২ টাকার নোট দিয়ে তৈরি পোশাক, কাঁসা-পিতল, কড়ি, ঝিনুক ও হাতির দাঁতের তৈরি শোপিস দেখা গেল এদিক-ওদিক। বারান্দায় রয়েছে প্রাচীন সব নিদর্শন। ঢাকা না থাকায় ধুলার আস্তরণ অনেক নিদর্শনে। তবে কিছু কাঁচের ফ্রেমেও রাখা আছে।

গতকাল শুক্রবার (৭ মার্চ) এই সংগ্রহশালায় গিয়ে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা থেকে সংগ্রহশালা দেখতে এসেছেন বেশ কয়েকজন। সেই দলেরই একজন শাহজাদপুর সরকারি কলেজের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র সালমান বলেন, ‘স্থানীয় লোকেদের মুখে শুনেই আমরা এখানে এসেছি। সংগ্রহশালায় অনেক কিছুই দেখা হয়েছে। যেগুলো আমাদের কখনও দেখা হয়নি।’
সংগ্রহশালার স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম আজাদ তালুকদার জানান, ‘প্রায় ২৭ বছর ধরে এসব সংগ্রহ করছেন। শুরুর দিকে সংরক্ষণ করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। রাখাও ছিল এলোমেলোভাবে। তাঁর স্ত্রী জেসমীন সুলতানা এ কাজে সহযোগিতা করছেন।’

দেশ ও বিদেশের এসব উপকরণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে বলেও জানান আজাদ। তিনি এখনো সংগ্রহশালাটি সমৃদ্ধ করতে কাজ করছেন। দর্শনার্থীদের জন্য সংগ্রহশালাটি খুলে দেওয়া হয়েছে। সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে সংগ্রহশালাটি। অন্য দিনগুলোতে কেন নয়? এ ব্যাপারে আজাদ বলেন, পেশাগত কারণে সময় দিতে পারি না। যেহেতু সংগ্রহশালাটি বাসায়, তাই প্রতিদিন খোলা রাখা সম্ভব হয় না। তবে শুক্রবার প্রায় ২০০ জন দর্শনার্থী আসেন।’
১৯৯৪ সাল। সবে এসএসসি পরীক্ষা শেষ করেছেন আজাদ। অফুরন্ত সময়। স্বচ্ছল পরিবার। এক আত্মীয়ের বাসায় ঘুরতে যান আজাদ। সেখানেই তিনি পান হাতির দাঁত; যেটা তাঁর আত্মীয় বাড়িতে বংশপরস্পরায় সংগ্রহ করেছিলেন। সেই যে মাথায় সংগ্রহের পোকা ঢুকে। তখন থেকেই বিভিন্ন জেলা ও বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ শুরু করেন।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা আফরোজ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ব্যক্তি উদ্যোগে সংগ্রহশালা গড়ে তোলার জন্য আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই। কেননা এখন আর কেউ এরকম প্রাচীন সামগ্রী সংগ্রহ করে না। আজাদের সংগ্রহশালাটি আমি পর্যবেক্ষণ করে দেখব।’