মাশরুম চাষে সাড়া ফেলেছেন ভৈরবের মহসিন

অল্প শ্রম ও খরচ কম হওয়ায় মাশরুম চাষ করে সাড়া ফেলেছেন কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার শিমূলকান্দি ইউনিয়নের মধ্যেরচর গ্রামের মহসিন মিয়া নামের এক চাষি। তিনি ঢাকার সাভারে অবস্থিত মাশরুম চাষ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থেকে ১০ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এই সবজি চাষ শুরু করেন। প্রতিদিন তার মাশরুম শেড থেকে ৫-৭ কেজি মাশরুম উৎপাদন হচ্ছে।
মাশরুম চাষি মহসিন মিয়া জানান, প্রশিক্ষণ শেষে তিনি গত বছরের ১০ মার্চ নিজ বাড়িতে প্রথমে ২০০ স্পুন তৈরি করে মাশরুমের চাষাবাদ শুরু করেন। এতে তিনি অল্প দিনেই বেশ সফলতা পান। পরে তিনি সেটি দুই হাজার স্পুনে উন্নীত করেন। এতে গড়ে তার প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ কেজি মাশরুম উৎপাদন হচ্ছে। প্রতি কেজি মাশরুম তিনি ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এতে তার প্রতিদিন বিক্রি ১৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা। খরচ বাদে তার লাভ হচ্ছে এক থেকে দেড় হাজার টাকা। তিনি মনে করেন, এমন মুনাফা আর কোনো চাষাবাদে সম্ভব নয়।
মহসিন মিয়া আরও জানান, তার এই সফলতা দেখে আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। তারা প্রতিদিন তার মাশরুম শেড পরিদর্শন করে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তারা নিজেরাও মাশরুম চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
মহসিন মিয়া জানান, পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ও সুস্বাদু এই সবজিটির ব্যাপক চাহিদা আছে ভৈরবের ক্রেতাদের মাঝে। তাই প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা এসে তার শেড থেকে চাহিদা মতো কিনে নিয়ে যাচ্ছেন মাশরুম।
তিনি জানান, যে কেউ ইচ্ছা করলে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচে এমন একটি শেড তৈরি করে মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করতে পারেন। যা অন্যকোনো চাষাবাদে সম্ভব না। তিনি নতুন উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
কথা হয় খামারে আসা আগ্রহী দুই কৃষক এনামুল মিয়া ও খলিল মীরের সাথে। তারা জানান, মহসিন মিয়ার সফলতায় তারা মাশরুম চাষে আগ্রহী হয়েছেন। তাই খোঁজ-খবর নিতে এসেছেন। আগামীতে তারাও মাশরুমের শেড করবেন।

খামারে আসা মাশরুম ক্রেতা জাহাঙ্গীর হোসেন, উজির উদ্দিন ও হাফসা বেগম জানান, মাশরুম তাদের পরিবারের প্রিয় একটি সবজি। নুডলস, পাকোড়া, সুটকি ও মাংসের তরকারিতে মাশরুম দিয়ে রান্না করে খান তারা। এতে পুষ্টির চাহিদা পূরণসহ খাবার হচ্ছে বেশ সুস্বাদু।
তারা আরও জানান, এতোদিন তারা ভৈরব বাজারের বিভিন্ন দোকান থেকে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে কিনে আনতেন মাশরুম। কিন্তু মহসিন মিয়ার খামার থেকে তারা মাত্র ৩০০ টাকা কেজি দরে পাচ্ছেন। দামে সাশ্রয়ী ও হাতের নাগালে খুব সহজে পাওয়ায় বেশ উপকৃত হচ্ছেন তারা।
ভৈরব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম জানান, পুষ্টি উন্নয়ন দারিদ্র হ্রাসকরণ প্রকল্পের আওতায় মধ্যেরচর গ্রামের মহসিন মিয়া নামের এক কৃষককে ১০ দিনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় তিনি মাশরুম চাষ করে সফলতা পান। এখন তার এই সফলতায় অন্যান্যরাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
আকলিমা বেগম আরও জানান, নতুনরা মাশরুর চাষ করতে চাইলে তাদেরকেও কৃষি অফিস থেকে সব রকমের সহায়তা প্রদান করা হবে।