জিআই স্বীকৃতিতে অষ্টগ্রামের পনিরের চাহিদা ও সম্ভাবনা বেড়েছে

কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রামের পনির এখন শুধু স্থানীয় ঐতিহ্য নয়, বরং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিতি পেয়েছে। শত বছরের পুরোনো এই দুগ্ধজাত খাবার সম্প্রতি পেয়েছে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি। এর মাধ্যমে পণ্যের মান ও মর্যাদা যেমন বেড়েছে, তেমনি বাণিজ্যিক সম্ভাবনার নতুন দরজাও খুলেছে।
গত ৩০ এপ্রিল ঢাকায় ‘বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস-২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অষ্টগ্রামের পনিরকে জিআই সনদ প্রদান করা হয়। এতে পণ্যের বাজারমূল্য ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চার শতাব্দী পুরোনো এই পনিরের উৎপত্তি মুঘল আমলে। কথিত আছে, মোগল সেনাপতি দেলোয়ার খানের ছেলে পনির খান অষ্টগ্রামে গরু-মহিষের বাথান দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজ হাতে দুধ দিয়ে তৈরি করেন এ বিশেষ খাবারটি। পরে তার নামেই এর নামকরণ হয় ‘পনির’। সেই থেকে এটি ধীরে ধীরে হাওর অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
অষ্টগ্রামের দত্তপাড়া বসতির দত্ত বংশীয়রা প্রথম বাণিজ্যিকভাবে পনির তৈরি শুরু করেন। বর্তমানে এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি হয়- গরু বা মহিষের কাঁচা দুধকে ছানায় রূপান্তর করে বাঁশের ছাঁচে ফেলে লবণ দিয়ে সংরক্ষণযোগ্য পনিরে পরিণত করা হয়। এক কেজি পনির তৈরিতে লাগে প্রায় ১০ কেজি দুধ।
পনির কারিগর মো. তোরাব আলী জানান, তিনশ বছরের পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রেখেই তিনি পনির তৈরি করছেন। তবে ষাটের দশকের পর থেকে পনির তৈরির জৌলুস কিছুটা ম্লান হয়ে গেলেও পেশাটি এখনও টিকে আছে কিছু পরিবারে। বড় পরিসরে শিল্প গড়ে না ওঠা ও সরকারি সহায়তার অভাবকেই এর প্রধান কারণ হিসেবে মনে করছেন স্থানীয়রা।
কারিগর নিশান মিয়া বলেন, জিআই সনদ পাওয়ায় পনিরের দাম ও চাহিদা বাড়বে। যদি সরকার সহযোগিতা করে, তাহলে এটি বড় শিল্প হতে পারে।
আইনজীবী ও কিশোরগঞ্জের সন্তান শেখ মো. রোকন রেজা বলেন, পনির প্রক্রিয়াজাত খাদ্য খাতের সম্ভাবনাময় পণ্য। মান নিয়ন্ত্রণ, প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহায়তা দিলে অনেকেই আগ্রহী হবে।
বর্তমানে অষ্টগ্রামে সরকারি তালিকাভুক্ত পনির কারিগরের সংখ্যা ১৪ জন, তবে আগ্রহীদের সংখ্যা বাড়ছে। পর্যটন মৌসুমে চাহিদা বেশি থাকে, তখন বিক্রি বাড়ে। ব্যবসায়ীরা এখন জিআই লোগো ব্যবহার করে ব্র্যান্ডিংয়েরও উদ্যোগ নিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা উজ্জ্বল মিয়া বলেন, অষ্টগ্রামের পনির এখন শুধু গ্রামীণ ঐতিহ্য নয়, বরং নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সম্ভাব্য রপ্তানি পণ্য।
পনির প্রস্তুতকারী রিকা আক্তার জানান, ১০ কেজি দুধ থেকে ১ কেজি পনির তৈরি হয়। প্রতিকেজি বিক্রি হয় ৯০০-১২০০ টাকায়। যারা একবার খেয়েছেন, সবাই প্রশংসা করেছেন।
অষ্টগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. দিলশাদ জাহান বলেন, এখানকার পনিরকে কেন্দ্র করে নতুন ব্র্যান্ডিং ও প্রচার শুরু হচ্ছে। জাইকার সহযোগিতায় একটি সেলস সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। যারা পনির তৈরি করছেন, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।