চা-বাগানে মাল্টা চাষে সাফল্য, কৃষকদের নতুন আশা

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধায় সমতল অঞ্চলে চা-বাগানে ‘সাথি ফসল’ হিসেবে মাল্টা চাষ করেছেন জাফর ইকবাল (৩৮) নামের এক যুবক। তিনি ১ একর ৫০ শতক জমিতে চায়ের সঙ্গে মাল্টা চাষ করেছেন। চা-বাগান থেকে বছরে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা লাভ হলেও সাথি ফসল থেকে পেয়েছেন তিন লাখ টাকার বেশি। উপজেলায় তার মতো অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে চা-বাগানে মাল্টার চাষ শুরু করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৯ সাল থেকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাষিদের বারি মাল্টা-১ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করে। এ সময় আগ্রহী চাষিদের বিনামূল্যে মাল্টা চারাও প্রদান করা হয়। সেই চারা দিয়েই ভাগ্য খুলেছে জাফর ইকবালের। বছরে কাচা চা-পাতা বিক্রি করে যে মূল্য তিনি পেতেন তার চেয়ে তিন গুণ বেশি মূল্য পাচ্ছেন সাথি ফসল হিসেবে মাল্টা চাষ করে।
মাল্টা চাষি জাফর ইকবাল জানান, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের পরামর্শে তার চা-বাগানে সাথি ফসল হিসেবে ১ একর ৫০ শতক জমিতে রোপণ করেন বারি মাল্টা-১ জাতের ৪৫০টি চারা। রোপণের এক বছর পর মাল্টার ফলন পেতে শুরু করেন তিনি। গত মৌসুমে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন জাফর ইকবাল। তিনি আশা করছেন, এ বছর যে পরিমাণ ফুল এসেছে প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে পাঁচ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে ফল বিক্রি হবে।

জাফর ইকবাল আরও জানান, কয়েক বছর থেকে কাঁচা চা-পাতার দাম ভালো না থাকায় তেমন লাভবান হচ্ছে না চাষিরা। কাঁচা চা-পাতার ভালো দাম না পেয়ে অনেকে চায়ের বাগান তুলে ফেললেও তিনি তার চা-বাগানে সাথি ফসল হিসেবে মাল্টা গাছের চারা রোপণ করেন। কিছুদিন পর তার মাল্টা গাছে ফল আসতে শুরু করে।
বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মোসাদ্দেকুর রহমান বলেন, ‘এ অঞ্চলের মানুষ ভাবেনি মাল্টা চাষ করা যায় এই সমতল ভূমিতে। মাল্টা চাষ করার জন্য একটা সময় মানুষকে অনেক উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে, তারপরেও তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতেন না। এখন মাল্টার ফলন দেখে অনেক চাষি ব্যাপক আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। চা-পাতার দাম কম থাকায় আমি চা-বাগানে সাথি ফসল হিসেবে উদ্বুদ্ধ করি মাল্টা চাষ করতে। এটা চাষ করে অনেক কৃষক সফলতাও পেয়েছেন।’

তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তামান্না ফেরদৌস বলেন, ‘তেঁতুলিয়া উপজেলায় মাল্টা একটি সম্ভাবনাময় ফল হিসেবে ইতোমধ্যে পরিচিতি লাভ করেছে। তেঁতুলিয়া উপজেলায় ২৪ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হচ্ছে। উপজেলার সাতটি ইউনিয়নেই বারি-১ জাতের মাল্টার চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে। এখানকার চাষিরা চায়ের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে মাল্টা, আবার মাল্টার সঙ্গেও বিভিন্ন ফসল চাষ করছেন। তেঁতুলিয়ার মাটি ও আবহাওয়া মাল্টা চাষের জন্য উপযোগী। আমরা দুই-তিন বছর থেকে দেখেছি, এখানকার মাল্টা রসালো ও মিষ্টি হচ্ছে। এই এলাকায় বারি-১ জাতের মাল্টা গাছ বিস্তার লাভ করেছে। আমরা চাষিদের বাগান নিয়মিত তদারকি করছি এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি।’