হাতে মুড়ি ভেজে স্বাবলম্বী প্রতিভা রাণী

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া সবুজবাগ হিন্দু পাড়ার নির্মল চন্দ্র ব্যাপারীর স্ত্রী প্রতিভা রাণী। অভাবের সংসারে দুই সন্তানের পড়াশোনার খচর বহন করা তার স্বামীর একার পক্ষে কষ্টকর হওয়ায় তিনি শুরু করেন হাতে মুরি ভাজার কাজ। সময়ের সাথে সাথে ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে প্রতিভা রাণীর। তার বাড়তি আয়ে ঘুচতে শুরু করে সংসারের অভাব। অভাবের সংসারে আসতে থাকে সচ্ছলতা। প্রথমে তিনি একা মুড়ি ভাজা শুরু করলেও তিন বছরের মাথায় তার কাজে দুই নারীকে সহযোগী হিসেবে কাজে নেন। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তার। এখন তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা প্রতিভা রাণী। তার বাড়িতে এখন কর্মসংস্থান হয়েছে সমাজের পিছিয়ে থাকা নারীদের। প্রতিভা রাণীর বাড়িতে ৮টি চুলায় ১০ থেকে ১৫ জন নারী মুরি ভাজার কাজ করেন।
প্রতিভা রাণীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ভোর থেকে শুরু হয় মুড়ি ভাজার কর্মযজ্ঞ। মাটির চুলায় হাতে মুড়ি ভাজা হয়। কেউ লবণ পানি আর রসুন মেশানো চাল মাটির চুলায় হালকাভাবে ভেজে নিচ্ছেন। আবার কেউ পাশের চুলায় মাটির পাত্রে উত্তপ্ত করছেন বালু। আবার উত্তাপ্ত বালুর মধ্যে দিয়ে বিশেষভাবে নাড়াতে থাকেন অন্য নারী শ্রমিকরা। এতে মুহূর্তেই গরম চাল মুড়িতে পরিণত হয়। কোনো রকম রাসায়নিক ছাড়াই ভাজা হয় সুস্বাদু এই মুড়ি। যে কারণে উপজেলা জুড়ে এ মুড়ির কদর অনেক বেশি।
প্রতিভা রাণী জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ মুড়ি ভেজে নিতে তার বাড়িতে ভীর করেন।
প্রতি কেজি মুড়ি ভাজতে নেওয়া হয় ২৫ টাকা। প্রতিদিন প্রায় তিন মণ চালের মুড়ি ভাজা হয় প্রতিভা রাণীর বাড়িতে। প্রতি মাসে সব খচর বাদ দিয়ে তার ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় হয়। মুড়ি ভাজার কাজে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন স্থানীয় ১০ থেকে ১৫ জন নারী শ্রমিক। তারাও প্রতি মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করেন।
প্রতিভা রাণীর সঙ্গে মুরি ভাজেন শ্রমিক লক্ষী রাণী। তিনি বলেন, প্রতিভা রাণীর সঙ্গে মুরি ভাজার কাজ করে আমিসহ অনেক নারী স্বাবলম্বী হয়েছে। আমরা মুড়ি ভেজে যে টাকা আয় করি তা দিয়ে সংসারের চাহিদা পূরণ করি। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনায় ব্যয় করি।
আরেক নারী শ্রমিক সুগন্ধা রাণী বলেন, সংসারে অভাব ছিল। স্বামী যা ইনকাম করে তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টের ছিল। কয়েক বছর ধরে মুড়ি ভেজে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা ইনকাম করি। যা দিয়ে সংসার ভালোভাবেই চলছে।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা মো. আলামিন বলেন, প্রতিভা রাণীর বাড়িতে মুড়ি ভাজা পরিদর্শন করব। তাকে বিসিকের পক্ষ থেকে কারিগরি প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহায়তা দেওয়া হবে।