প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে চীনা শিল্প স্থাপনের নতুন দ্বার উন্মোচনের আশা বেপজাপ্রধানের

বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান আশা করছেন, প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন চীন সফর বাংলাদেশে চীনের উচ্চমানের বৈদ্যুতিক পণ্য, যানবাহন ও চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদনকারী শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে একটি নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।
বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান দেশের সামগ্রিক বিনিয়োগ পরিস্থিতি ও আরও বিনিয়োগ আকর্ষণের পদক্ষেপ সম্পর্কে জাতীয় সংবাদ সংস্থা বাসসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন আইকনিক ব্যক্তিত্ব এবং তিনি বিশ্বজুড়ে গ্রহণযোগ্য।’
বেপজার চেয়ারম্যান আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টার এই সফরের মাধ্যমে আমরা আরও চীনা বিনিয়োগ আশা করছি। এ সফরে বিশেষ করে, বাংলাদেশে উচ্চমানের চীনা পণ্য উৎপাদনকারী শিল্প স্থাপনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ২৬-২৯ মার্চ চীন সফরের কথা রয়েছে।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সফরকালে চীনা কারখানাগুলোকে বাংলাদেশে স্থানান্তরের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে, যাতে করে এ দেশকে একটি উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায়।
চীনা কারখানাগুলোর স্থানান্তর সম্পর্কে জিয়াউর রহমান বলেন, বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা ও শুল্ক আরোপের কারণে চীনা বিনিয়োগকারীরা অন্যান্য দেশে বিনিয়োগের জন্য আগ্রহী- যা বাংলাদেশের জন্য একটি ‘সুবর্ণ সুযোগ’ তৈরি করেছে।
বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চীনা রপ্তানির ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের আগে উৎপাদনকারীদের উৎপাদন কেন্দ্র স্থানান্তর করতে হবে। তাই, আমরা বাংলাদেশে আরও অনেক বিনিয়োগ আসতে দেখব। শিল্প স্থানান্তরের জন্য চীনা বিনিয়োগকারীদের প্রথম পছন্দ বাংলাদেশ।’
গত বছরের আগস্টে গণঅভ্যুত্থান ও ক্ষমতা পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বেপজা প্রধান বলেন, সরকারের কঠোর পদক্ষেপ ও নানা উদ্যোগের কারণে পরিস্থিতি সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা এখন এখানে বিনিয়োগ করতে আসছেন।
জিয়াউর রহমান আরও বলেন, ‘অনেক চীনা ও কোরিয়ান বিনিয়োগকারী ইতোমধ্যেই ইপিজেডে বিনিয়োগ করেছেন। আমরা এখন ইউরোপীয় ও বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো থেকেও বিনিয়োগের সন্ধান করছি। আমি মনে করি যে, দেশের ভাবমর্যাদা উন্নত হওয়ার কারণে ইউরোপীয় ও অন্যান্য দেশগুলোও এদেশে তাদের বিনিয়োগ বাড়াবে।’
বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, চীনা বিনিয়োগের প্রবাহ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে, চীনা বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগকারীদের সুষ্ঠু ভ্রমণ নিশ্চিত করার জন্য সাংহাই, গুয়াংজু ও অন্যান্য শিল্পোন্নত শহরে কনস্যুলেট অফিস খুলতে বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছেন।
বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আরও বলেন, বেশির ভাগ চীনা বিনিয়োগকারীই বেইজিংয়ের বাইরে। দূরত্বের জন্য ভিসা পেতে প্রচুর সময় লাগে। তাই, তারা আমাদের সাংহাই ও গুয়াংজুতে কনস্যুলেট অফিস স্থাপনের জন্য অনুরোধ করেছেন। আমরা যদি সেখানে অফিস স্থাপন করি, তাহলে বাংলাদেশে আরও বেশি চীনা বিনিয়োগকারী আসবেন।
জিয়াউর রহমান বলেন, বেপজা ইতোমধ্যেই সরকারের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করেছে এবং সরকারও এটি নিয়ে কাজ করছে।
বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আরও বলেন, ঢাকা থেকে সাংহাই ও গুয়াংজুতে সরাসরি ফ্লাইট বাড়ানোর জন্য চীনা বিনিয়োগকারীরা অনুরোধ করেছেন।
দেশের কৌশলগত অবস্থান ও গতিশীল অর্থনীতির কথা তুলে ধরে বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে কৌশলগত ভৌগলিক অবস্থানে অবস্থিত- যা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাজারে নিরবচ্ছিন্ন প্রবেশাধিকার প্রদান করে।
আমাদের ১৮ কোটিরও বেশি প্রাণবন্ত জনসংখ্যা, যাদের বেশিরভাগই তরুণ, শিক্ষিত ও দক্ষ উল্লেখ করে বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, এটি একটি শক্তিশালী কর্মীবাহিনী নিশ্চিত করে- যা ব্যবসাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। আর বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রধান আকর্ষণ হলো এর সাশ্রয়ী ও সহজে প্রশিক্ষিত কর্মীবাহিনী। দেশটিতে কর্মীদের মজুরি এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন।
বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আরও বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য দেশের বিনিয়োগ নীতিগুলো ধারাবাহিকভাবে উদারীকরণ করা হয়েছে। তদুপরি, বেপজা তার বিনিয়োগকারীদের জন্য ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ প্রদান করে আসছে- যা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য দেশের ইপিজেডে শিল্প স্থাপন ও পরিচালনা করা সহজ করে তুলেছে।
এই কারণগুলো উৎপাদন খাতে আরও চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণে ইতিবাচক অবদান রাখছে।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, চীনা বিনিয়োগকারীরা ইপিজেড ও বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় ১১০টি শিল্প ইউনিট স্থাপন করেছে, যার বিনিয়োগ প্রায় ১.৫০ বিলিয়ন ডলার এবং এখানে প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার ৮৫০ জন বাংলাদেশির কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে।
২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেপজা ২৬টি কোম্পানির সঙ্গে একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৮টিই চীনা কোম্পানি।