চাকরির পিছনে না ছুটে সফল কৃষি উদ্যোক্তা মনিরুল

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের কবুরহাট গ্রামের কিনাজ উদ্দিনের ছেলে মো. মনিরুল ইসলাম (২৫)। তিনি ডিগ্রি পাশ করে চাকরির পিছনে না ছুটে হয়েছেন কৃষি উদ্যোক্তা। চলতি মৌসুমে প্রায় ৬ বিঘা জমিতে ‘কালো সোনা’ খ্যাত উচ্চফলনশীল ‘লালতির কিং’ জাতের পেঁয়াজ বীজ এবং ১৫ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। ৬ বিঘা জমিতে তার প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ৬ বিঘা জমিতে ৫৫০ থেকে ৬৫০ কেজি বীজ উৎপাদনের আশা করছেন মনিরুল ইসলাম।
এছাড়াও বিঘাপ্রতি পেঁয়াজ চাষে তার ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ বছর হঠাৎ তাপমাত্রা বৃদ্ধি জনিত আবহাওয়ার কারণে পেঁয়াজের ফলন কমেছে। তবুও প্রতিবিঘায় ৭০ থেকে ৭৫ মণ ফলনের প্রত্যাশা করছেন মনিরুল।
কৃষক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, গত মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে প্রায় তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ করে ১৯০ কেজি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হয়েছিল। প্রতিকেজি ৫ হাজার টাকা দরে তা প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টাকায় বিক্রি করেছিলাম।
মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, গত বছর প্রায় ১০ বিঘা জমি চাষাবাদ করে প্রায় ৯০০ মণ পেঁয়াজ পেয়েছিলাম। প্রতিমণ পেঁয়াজ গড়ে এক হাজার ৫০০ টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি করেছিলাম।
পড়াশোনা করে অন্যরা ভালো চাকরি করছে। আপনি চাকরি না করে কৃষিকাজে কেন? এমন প্রশ্নে মনিরুল বলেন, চাকরি মানে অন্যের অধীনে থাকা এবং সীমাবদ্ধ আয়। আর উদ্যোক্তা মানে স্বাধীন এবং সীমাহীন আয়। তাই চাকরি না খুঁজে কৃষিকাজ করে এখন প্রতিমাসে লাখ টাকার বেশি আয় করছি। সরকারি সহযোগিতা পেলে নিজেকে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি অন্যের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে ভবিষ্যতে একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হতে পারব।
মনিরুলের চাচা কৃষক রইচ উদ্দিন বলেন, শিক্ষিত হয়ে মনিরুল চাকরি না করে আধুনিক পদ্ধতিতে অন্যের জমি লিজ (ইজারা) নিয়ে চাষ করছেন।
রইচ উদ্দিন আরও বলেন, ২০১৬ সালে এসএসসি পাশ করে ইউটিউব দেখে এবং কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে মাত্র ১৬ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ চাষ করে লাভের মুখ দেখেন মনিরুল। এরপর সময়ের সাথে সাথে বাড়তে থাকে তার কৃষি জমি ও চাষাবাদ।
শ্রমিক ফজলু শেখ বলেন, ‘মনিরুল বেটা মেলা জমিতে পেঁয়াজ, পেঁয়াজ বীজ, ভূট্টা, কলা, ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করে। প্রতিদিন ৫০০ টাকা হাজিরাতে আমরা কাজ করি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাইসুল ইসলাম বলেন, চাকরি না করে আধুনিক কৃষিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন মনিরুল ইসলাম। প্রণোদনা প্রদানসহ কৃষি কার্যালয় থেকে মনিরুলকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য সরকারি ঘর প্রদান, জমিতে সেচ পাম্প স্থাপনসহ মনিরুলকে নানামুখী সহযোগিতা করা হচ্ছে। বেকারত্ব নিরসনে আগ্রহী অন্যান্য যুবকদের আধুনিক কৃষিতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।