প্রবাসীর মেয়েকে নির্যাতনের মামলায় লেডি বাইকার এশা কারাগারে

খুলনার লেডি বাইকার ইরিন জাহান এশাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। আজ রোববার (২৩ মার্চ) দুপুরে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানো আদেশ দেন।
এশার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি প্রভাবশালীর মেয়ে বা স্ত্রীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পরিবারের কাছে বড় অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করেন। তাঁর একটি চক্র রয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
প্রথমে এক তরুণীকে নির্যাতনের অভিযোগে লেডি বাইকার এশাসহ তাঁর ভাই মো. খালিদ হাসানকে (৩৮) গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা বাদী হয়ে সোনাডাঙ্গা থানায় একটি মামলা করেন।
পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, ওই তরুণীর বাবা ফ্রান্স প্রবাসী। দীর্ঘ ১০ বছর ফ্রান্সে থাকাকালীন ইরিন জাহান এশা বাদীর মেয়ের (১৭) সঙ্গে বান্ধবী সুলভ আচরণ করে দীর্ঘদিন ধরে নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করিয়ে নেশায় আসক্ত করে ফেলেন। বিভিন্ন সময় তাঁর বাসায় ওই তরুণীকে ডেকে নিয়ে মাদকদ্রব্য সেবন করাতেন। তরুণীর বাবা তাঁকে একাধিকবার নিষেধ করা সত্ত্বেও তা অমান্য করে ওই তরুণীকে ডেকে নিয়ে যেতেন। বাদীর মেয়ে অতিরিক্ত নেশাদ্রব্য সেবন করে তাদের সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করে। এমনকি মাদক সেবন করতে না পারলে বিভিন্ন সময় বাসার জিনিসপত্র ভাঙচুর করে পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি করে।
এ ঘটনায় বাদী নিরুপায় হয়ে শনিবার (২২ মার্চ) দিনগত রাত অনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে আত্মীয়স্বজনের সহায়তায় মেয়েকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করার উদ্দেশে বাড়ি থেকে রওনা হয়। এ সময় বাড়ির সামনে লেডি বাইকার এশাসহ অন্য আসামিরা মোটরসাইকেলে এসে তাদের অনুসরণ করতে থাকে। রাত সোয়া ১২টার দিকে বাংলাদেশ বেতার ভবনের সামনে পৌঁছালে আসামিরা মোটরসাইকেলযোগে বাদীর অ্যাম্বুলেন্সের সামনে এসে গতিরোধ করে। অ্যাম্বুলেন্স থামার পর জোরপূর্বক অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে প্রবেশ করে বাদীর মেয়ের হাত ও কাপড় ধরে টানাহেচড়া করে তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
অভিযোগে আরও জানা যায়, এ সময় ইরিন জাহান এশা ও তাঁর ভাই মো. খালিদ হাসান অ্যাম্বুলেন্সে থাকা অবস্থায় চালক টান দিয়ে শিববাড়ি মোড়ে পৌঁছায়। তখন বাদীর ডাক-চিৎকার শুনে সেখানে দায়িত্বরত নৌবাহিনীর সদস্যরা এগিয়ে এসে আসামিদেরসহ বাদী ও তার মেয়েকে হেফাজতে নেয়। এরপর নৌবাহিনীর সদস্যরা ঘটনার বিষয়ে সোনাডাঙ্গা মডেল থানা পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পরে নৌবাহিনীর সদস্যরা আসামিদের থানা পুলিশের কাছে হস্তাস্তর করে এবং বাদীর মেয়েকে বাদীর কাছে বুঝিয়ে দেয়। আসামিদের কাছ থেকে তরুণীকে উদ্ধারের সময় ধস্তাধস্তিতে ওই তরুণী আঘাত পাওয়ায় বাদী তাকে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।
পুলিশ জানায়, বিভিন্ন সময় ওই মেয়ের সঙ্গে মিশতে নিষেধ করলে লেডি বাইকার ইরিন জাহান এশা বাদীকে ভয়ভীতি দেখাতেন ও হুমকি দিতেন। এ বিষয়ে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ ঘটনার বিষয়ে গুরুত্বরপূর্ণ তথ্য পেয়েছে, যা যাচাই-বাছাই চলছে। প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে পুলিশ জানতে পারে আসামিরা প্রফেশনালভাবে প্রভাবশালীর মেয়ে বা স্ত্রীকে টার্গেট করে তাদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে মাদক সেবনসহ অনৈতিক কাজে লিপ্ত করে এবং ভিকটিমদের নিজ আয়ত্বে নিয়ে এসে পরিবারের কাছে বড় অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করে।
খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মিজানুর রহমান বলেন, এশা এক মেয়েকে বিভিন্ন সময়ে মাদক সেবন করাত। শনিবার দিনগত রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই মেয়ের পরিবার তাকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে যেতে চায়। এ সময় এশাসহ কয়েকজন অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে মেয়েটিকে টানাহেঁচড়া করে। একপর্যায়ে ওই মেয়েটি আঘাত পায়। পরে শিববাড়ি মোড় এলাকায় ছাত্র-জনতা এবং নৌবাহিনীর দায়িত্বরত একটি টিম তাদের উদ্ধার করে এবং এশাকে আটক করে। পরে সেহরির সময় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আজ দুপুরে এশাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।