সারা দেশে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, উৎসাহ-উদ্দীপনায় উদযাপিত হচ্ছে ঈদ

এক মাস সিয়াম সাধনার পর এলো খুশির ঈদ। সারা দেশে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদ আনন্দের দিন হলেও বিগত বছরগুলোতে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসব পালনে ছিল নানা ভয়, শঙ্কা ও গ্রেপ্তারের আতঙ্ক। তবে এবার সারা দেশে সব শ্রেণির মানুষ পুরোপুরি উৎসবের আমেজে ঈদ উদযাপন করছেন।
রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ঈদের নামাজ আদায় শেষে প্রধান উপদেষ্টা মুসল্লিদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে যে ঐক্য তৈরি হয়েছে, সব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সেই ঐক্য অটুট রাখতে হবে। আগামীতে আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে এগিয়ে যাব।’
জুলাইয়ের যোদ্ধাদের স্মরণ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি পর্যায়ে গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণ করতে হবে। আহতদের রোগ মুক্তির জন্য প্রার্থনা করতে হবে। আগামীতে আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে এগিয়ে যাব। জুলাইয়ের যোদ্ধাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব।’
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘আজ নৈকট্যের দিন, ভালোবাসার দিন। আগত মুসল্লিসহ সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাই।’
বায়তুল মোকাররমে ঈদের পাঁচ জামাত, ফিলিস্তিনে শান্তি কামনায় দোয়া
প্রতিবছরের মতো এবারও পবিত্র ঈদুল ফিতরে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি ঈদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। জামাতগুলোতে বিপুলসংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নেন। প্রতিটি জামাত শেষে আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এবং দেশ-জাতি, মুসলিম উম্মাহ ও ফিলিস্তিনিদের জন্য কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
পরবর্তীতে সকাল ৭টায় প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ৮টা, ৯টা, ১০টা ও ১০টা ৪৫ মিনিটে আরও চারটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত
রাজধানীর হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার (৩১ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদ জামাত শুরু হয়। এতে অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ঈদের প্রধান জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক এবং মোকাব্বির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন ক্বারি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান।
প্রধান ঈদ জামাত শেষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মুসল্লিদের ঈদের শুভেচ্ছা জানান। একইসঙ্গে তিনি জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতদের স্মরণ করেন এবং শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কমনা করেন। একইসঙ্গে আহত ও তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সহমর্মিতা ও তাঁদের সুস্থতা কামনায় প্রার্থনার আহ্বান জানান। তিনি ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় দোয়া-মোনাজাত করা হয়। নামাজ শেষে মুসল্লিরা পরস্পরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও কোলাকুলি করেন।
মোগল আমলের ঈদ জামাত, চলছে মেলা
দেশের সার্বিক মঙ্গল কামনা করে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। নামাজের পর দেশবাসীর কল্যাণে দোয়া করা হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আয়োজনে পুরাতন এ বাণিজ্য মেলার মাঠে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদ জামাত শেষে সকাল ৯টায় ঈদ আনন্দ মিছিল শুরু হয়। ঈদ মিছিলটি পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠ থেকে শুরু হয়ে সংসদ ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। ঈদ মিছিলটি ছিল বর্ণাঢ্য। মিছিলের সামনে শাহী ঘোড়া ও সামনে-পেছনে ২০টির মতো ঘোড়ার গাড়ি ছিল। ব্যান্ড পার্টি সুলতানি-মোঘল আমলের ইতিহাস সম্বলিত চিত্রকলাও ছিল। নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এই ঈদ আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে ঢাকার ৪০০ বছরের ঈদ ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
এ ছাড়া সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে মিছিল গিয়ে শেষ হওয়ার পর সেখানেই হচ্ছে সংক্ষিপ্ত একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে শিল্পীরা ঈদের গান পরিবেশন করছেন। থাকছে বাউলশিল্পীদের পরিবেশনা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময়ে সাধারণ মানুষদের আপ্যায়ন করা হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ এ সময় ঈদের সেমাই, মিষ্টি ও বাতাসা খেতে পারছেন। পাশাপাশি ঢাকা উত্তর সিটির ঈদ আনন্দ উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ দুই দিনব্যাপী ঈদ আনন্দমেলা।
ঈদের দিন এবং এর পরদিন এ মেলা হবে বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে। মেলায় বিভিন্ন পণ্যের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ২০০টির বেশি স্টল রয়েছে। দুই দিনই মেলা সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে। মেলায় শিশুদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলা থাকবে। খেলাধুলার জন্য রাখা হবে বিভিন্ন খেলার সামগ্রী।

লক্ষাধিক মুসল্লির অংশগ্রহণে দিনাজপুরে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত
দেশে ঈদের অন্যতম বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে। সকাল ৯টায় প্রায় লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে সেখানে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এই ঈদের জামাতে অংশ নিতে দিনাজপুর সদর উপজেলা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের কয়েকটি জেলার মুসল্লিরা আসেন। জামাতে ইমামতি করেন মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান।
বৃহৎ এ জামাতকে ঘিরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছিল কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। সিসিটিভি ক্যামেরার পাশাপাশি ছিল কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি। মাঠের আশপাশে র্যাব, বিজিবি, পুলিশ, আনসার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরাও তৎপর ছিলেন।
নামাজে অংশ নেন জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম, দিনাজপুর পৌর প্রশাসক বিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন মারুফ, জেলা বিএনপির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক, জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমিরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।

শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লির ঈদ জামাত
দেশের বৃহত্তম ঈদগাহ কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ময়দানে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন প্রায় ছয় লাখ মুসল্লি। আজ সোমবার (৩১ মার্চ) সকাল ১০টায় এ ময়দানে ১৯৮তম ঈদ জামাত শুরু হয়।
চার স্তরের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সকাল ৯টার আগেই ঈদ জামাতে অংশ নিতে মুসল্লিরা আসতে শুরু করেন। সকাল ১০টায় শুরু হওয়া ঈদ জামাতে ইমামতি করেন স্থানীয় বড় বাজার মসজিদের খতিব মাওলানা আবুল খায়ের মো. সাইফুল্লাহ।
নামাজ শেষে শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরশাদ মিয়া বলেন, ‘এবার ঈদ জামাতে আনুমানিক ছয় লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করেছেন।’
ঈদ জামাতে দূর-দূরান্তের মসুল্লিদের যাতায়াতের জন্য ‘শোলাকিয়া স্পেশাল’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছিল রেল কর্তৃপক্ষ। যার একটি ঈদের দিন সকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে ময়মনসিংহ থেকে এবং আরেকটি ট্রেন সকাল ৬টায় ভৈরব থেকে ছেড়ে আসে। ঈদের জামাত শেষে দুপুর ১২টায় পুনরায় মুসল্লিদের নিয়ে ফিরে যায়।