শিল্পায়নের যুগে বিলীন হয়ে যাচ্ছে কালীগঞ্জের মৃৎশিল্প

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় বিলুপ্তির পথে বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। কালের বিবর্তন আর শিল্পায়নের যুগে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে শিল্পটি। এই উপজেলায় বংশ পরম্পরায় এখনো মৃৎশিল্পকে আকঁড়ে ধরে বেঁচে আছে অনেক পরিবার। তবে প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের দাপটে ভিন্ন পেশায় চলে যাচ্ছেন তাদের অনেকে। যে কারণে হারাতে বসেছে হাজার বছরের ঐতিহ্যের এই শিল্প। কালীগঞ্জ উপজেলার একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিল্প হলো মৃৎশিল্প। পূর্ব-পুরুষদের ঐতিহ্য এবং বর্তমান সময়ে পারিবারিক চাহিদা পূরণের জন্য এই শিল্পে উপজেলার জামালপুর ও বক্তারপুর ইউনিয়নের প্রায় ১৫০টি পরিবার এখনো কাজ করে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, হাত এবং চাকার সাহায্যে কাদামাটি দিয়ে বিভিন্ন দ্রব্যাদি তৈরির পর কাঁচা থাকতে থাকতে তাতে কাঠি দিয়ে পাতা, ফুল, পাখি ও বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় নকশা করা হয় মাটির তৈরি জিনিসগুলোতে। কখনো আবার সেগুলো পোড়ানোর পর এতে নানা রঙের আকর্ষণীয় নকশাও করা হয়।
মৃৎশিল্পের সঙ্গে যুক্ত বক্তারপুর ইউনিয়নের নাওয়ান গ্রামের হরে কৃষ্ণ পাল বলেন, এ পেশায় থেকে জীবন ধারণ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সংসার আর চলছে না। পরিবারের লোকজন নিয়ে বেঁচে থাকার উপক্রম নেই। তাই অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছি।
হরে কৃষ্ণ পাল আরও বলেন, কালীগঞ্জ মৃৎশিল্পের জন্য একসময় বিখ্যাত ছিল। বর্তমানে অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল, প্লাস্টিক, সিরামিক, চিনামাটির আধুনিক তৈজসপত্রের কারণে মৃৎশিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। এছাড়া মাটি, জ্বালানিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবও রয়েছে। এখন মৃৎশিল্পের জন্য পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।
হরে কৃষ্ণ পাল জানান, যে পরিবারগুলো কাজ করছে, তারা নানা প্রতিকূলতার মধ্যে কোনো রকমে টিকে আছে। ১৫ থেকে ২০ বছর আগেও দৈনন্দিন নানা কাজে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের ব্যাপক ব্যবহার থাকলেও আধুনিকতার স্রোতে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে সুপ্রাচীন এই শিল্প।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদে এ বিষয়ে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, এই প্রাচীন শিল্প আমাদের কালীগঞ্জে আছে তা আমার জানা ছিল না। সরেজমিনে আমি পরিদর্শন করবো। আমাদের পক্ষ থেকে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।