‘বিচার করে আ.লীগকে ১০-২০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করলেই তো হয়’
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ চায় না বিএনপি— এই কথাটা বলল কে? একটা সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করে আওয়ামী লীগকে ১০-২০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করলেই তো হয়। এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী, অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা আব্বাস। এছাড়া চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এনটিভি অনলাইনের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট মাহমুদুল হাসান।
এনটিভি : অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন, এমপি ছিলেন, মন্ত্রী ছিলেন— দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার আপনার। কোন সময়টা আপনি মিস করেন এবং আপনাকে স্মৃতিকাতর করে?
মির্জা আব্বাস : ওয়ান-ইলেভেন আসার আগ পর্যন্ত আমরা ভালো ছিলাম। তবে মেয়র লাইফটা আমি মিস করি। যে সময় মেয়র ছিলাম ওই সময়টা খুব মিস করি। ওখানে একটা বিষয় ছিল, মেয়রের পাওয়ারটা প্রোপারলি এক্সারসাইজ করা যেত। আর সুযোগও ছিল। স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ ছিল। জনগণের খেদমত করার সরাসরি সুযোগ ছিল, একদম সরাসরি। ওখানে ওয়ান-টু-ওয়ান কথা বলা যেত এবং যেটা আসলে আন্দোলিত করত।
আমার মেয়র লাইফটা ছিল ডিফারেন্ট। স্বাভাবিক মানুষের মতো ছিল না। একটু অস্বাভাবিক ছিল। যেমন— আমি যখন সিটি কর্পোরেশনে গেলাম, প্রথম দিন, প্রথম প্রথম, আমার বয়স সবচেয়ে কম। ওখানে যারা আছেন বয়স্ক, বর্ষীয়ান, পাকাপোক্তা। বয়স্ক লোকজন এক্সপেরিয়েন্সড, এরা ভাবলো- বাচ্চা পোলাপান আসছে, কি করবে। আমি সকালে অফিসে ঢুকলাম, দেখি অফিস একেবারে খালি। ১০টা-১১টা বাজে, অফিসে লোক নাই। কোথায় গেল এরা? এখানে গেছে, অমুক জায়গায় গেছে, তমুক জায়গায় গেছে, কাজে গেছে— ইত্যাদি শুনতাম। বেসিক্যালি এরা অফিসে আসতোই না। আসতো ১১টা-১২টার পরে। এরপর আমি যেটা করলাম, সকাল সাড়ে সাতটায় অফিসে গিয়ে ঠিক আটটার সময় অফিসে তালা মেরে দিতাম। একেবারে জাস্ট লকড। পরে আস্তে আস্তে ঠিক হয়েছিল আরকি। এগুলো একটা এক্সপিরিয়েন্স। সিটি কর্পোরেশনে কাজ করার সুযোগ আছে। সৎভাবে কাজ করলে... সময়টা, কাজটা খুব এনজয় করেছি।
সিটি কর্পোরেশনের সরকারের কাছ থেকে টাকা নেয়— এটা আমার কাছে খুব খারাপ লাগে। আমি যখন মেয়র হয়েছিলাম তখন তো লোনে পেয়েছিলাম। তখন প্রায়ই দেড়শ, দুইশ কোটি টাকার মতো আমি লোনে পেয়েছিলাম সিটি করপোরেশনে। বেতন দেওয়ার টাকাও ছিল না। পরবর্তীতে আমি যখন রিজাইন করি, ১৪৭ কোটি টাকা রিজার্ভ রেখে এসেছিলাম। সমস্ত লোন শোধ করে এটা রেখে এসেছিলাম এবং এই যে লোন শোধ করে আবার রিজার্ভ রেখে আসা— এটা চাট্টিখানি কথা না। নাজিউর সাহেবও পারেননি, মালেক সাহেবও পারেননি। আমার আগে কেউ পারেনি, আমি ছাড়া। সিটি করপোরেশনে আমি টাকা রেখে আসছিলাম।
সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো— আমি আসার সময় ১৪৭ কোটি টাকা রেখে এসেছিলাম, সব দুই মাসের মধ্যে লোপাট হয়ে গেল। আবার সিটি কর্পোরেশন লোনে পড়ে গেল। বেসিক্যালি ওই সময়টা হাই-টাইম ছিল। শুধু আমার জন্য না, সমস্ত রাজনীতির জন্য ছিল ভালো সময়, সুবর্ণ সময়। ৯১ থেকে ৯৬ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গভর্নমেন্ট সবচেয়ে বেস্ট ছিল। এরপর আর কোনো ভালো গভর্নমেন্ট আসেনি। ২০০১ আমরা ক্ষমতায় ছিলাম, তখনও ভালো ছিলাম। কিন্ত ৯১ এর মতো আর কখনও হয়নি। মনে হয় না আর কখনও হবে। বিএনপি আবার আসলে আমরা চেষ্টা করে দেখব পারি কিনা?
এনটিভি : সামনে বড় দল হিসেবে বিএনপি প্রত্যাশিতভাবে ক্ষমতায় আসবে, যখনই নির্বাচন হয়। যেহেতু আওয়ামী লীগ নেই ...।
মির্জা আব্বাস : আরে ভাই, আওয়ামী লীগ থাকলেও বিএনপি সরকারে যেত। আওয়ামী লীগ নাই তো কি হয়েছে? আওয়ামী লীগ যদি থাকতো, সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি সরকারে যেত। আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্যতা বিএনপির আছে। আওয়ামী লীগ চলে গেছে, বিএনপির মহাভারত..., বহুত লাভ হয়ে গেছে— এই কথাটা ঠিক না। বিএনপি নিজের আলোতেই উজ্জ্বল। আওয়ামী লীগ কি বিএনপিকে একেবারে কোণঠাসা করতে পারত? পারত না।
এনটিভি : আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ইস্যুতে বিএনপির বক্তব্য নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এ বিষয়ে কি বলবেন?
মির্জা আব্বাস : আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ চায় না বিএনপি— এই কথাটা বলল কে? আমার কথা হলো— আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার যে যথাযথ পদ্ধতি আছে, যে সিস্টেমে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল আওয়ামী লীগ, ওই সিস্টেমে গেলেই তো হয়। একটা সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আইসিটিতে (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) বিচার করে আওয়ামী লীগকে ১০ থেকে ২০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করলেই তো হয়। না করলো কে? না তো করিনি আমরা! এখন কিছু কিছু লোক, যারা করতে পারবে না, এগুলো বিএনপির ঘাড়ের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। কিছু কিছু গোষ্ঠী, কিছু কিছু লোক, কিছু কিছু ইউটিউবার। এরা বিএনপির ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে।
এনটিভি : আপনি এক বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘দেশটা কারো বাপের না, আরে ভাই দেশটা আমার বাপের...।’
মির্জা আব্বাস : কারও এ কথা বলার অধিকার নেই, হ্যাঁ। যদিও গানে কথাগুলো শুনতে ভালো লাগবে। দেশটা যদি তোমার বাপের না হয়, তুমি আসলে কোথা থেকে? যদি তোমার বাপের না হয়, তোমার পোলা আসলো কোথা থেকে? দেশটা বংশপরম্পরায় সবার বাপের। ওই কথাটা আমার কাছে খুবই খারাপ লেগেছিল।