সারা দেশে আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ বরণ

পুরোনো বছরের দুঃখ-বেদনা, ভুল-ভ্রান্তি পেছনে ফেলে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বরণে রমনার বটমূল তথা রমনার প্রতিটি প্রান্তরসহ সমগ্র বাংলাদেশ মুখরিত হয়েছে। ছায়ানটের ৭২ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট প্রস্থের মঞ্চে একক ও সমবেত কণ্ঠে পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাংলা নববর্ষ বরণের আনুষ্ঠানিকতা।
আজ সোমবার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ সকাল থেকে সারা দেশে আনন্দ আর উৎসবের মধ্য দিয়ে চলছে বাংলা নতুন বছর বরণের নানা আয়োজন।
বাংলা নববর্ষে প্রতিবারের মতো এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ শোভাযাত্রা বের করে। তবে এবারের আয়োজনে বাংলা নববর্ষের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।
বাংলা নববর্ষে বাণী দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এবারের পহেলা বৈশাখকে অনন্য করে তুলেছে অসাম্প্রদায়িক ও সর্বজনীন চেতনা। ধর্মীয় উৎসবগুলো নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও পহেলা বৈশাখ সবার জন্য। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও আদিবাসীরাসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এ উৎসবে সমানভাবে অংশগ্রহণ করে। এটি কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়; বরং এটি একটি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ও জাতীয় সংহতির অনন্য প্রতিচ্ছবি।
বাংলা নববর্ষ সারা দেশেই উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয়েছে। এনটিভি ও এনটিভি অনলাইন প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন :
আবু সাঈদ রনি, রাজশাহী (সদর, গোদাগাড়ী ও পবা)
ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় রাজশাহীতে বরণ করা হলো পহেলা বৈশাখ। আজ সকালে সব শ্রেণির মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ও বর্ণিল আয়োজনে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটিকে স্বাগত জানায় রাজশাহীবাসী।
দিবসটি উপলক্ষে সকাল ৭টায় নগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড় থেকে শিশু একাডেমি পর্যন্ত ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ বের করে রাজশাহী জেলা প্রশাসন।
বর্ণিল সাজে এই শোভাযাত্রা শেষে শিশু একাডেমিতে পরিবেশন করা হয় জাতীয় সংগীত ও বর্ষবরণের গান ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’।
সকাল পৌনে ৮টায় একই স্থানে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের মহাপরিচালক মো. আ. রাজ্জাক সরকারসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে আগত সর্বসাধারণকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান।
আলোচনা সভা শেষে বর্ষবরণ উপলক্ষে জেলা শিল্পকলা একাডেমি এবং শিশু একাডেমি আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। পরে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় শিশু একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা ছাড়াও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিল্পী এবং নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেন।
গ্রামবাংলা ও বাঙালিদের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরতে শিশু একাডেমি চত্বরে দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলার স্টলগুলোতে মৃৎশিল্প, কুটির শিল্প, পাটজাত পণ্য, পোশাক ও ঐতিহ্যবাহী খাবার প্রদর্শন ও বিক্রি করা হয়।
আইয়ুব আলী, ময়মনসিংহ
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ময়মনসিংহে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন, মহানগর বিএনপি, বর্ষবরণ উদযাপন পর্ষদসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বর্ষবরণ উপলক্ষে শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালার আয়েজন করে।
সকালে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয় থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়ে নতুন বাজার টাউন হল মোড় ঘুরে জয়নুল আবেদীন পার্কের বৈশাখী মঞ্চে গিয়ে শেষ হয়।
শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার মো. মোখতার আহমেদ। শোভাযাত্রায় পায়রাকে শান্তির প্রতীক হিসেবে রাখা হয়। এ ছাড়া বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্য বায়স্কোপ, শাপলা, দোয়েল, মাছ স্থান পায় শোভাযাত্রায়। পরে বৈশাখী মঞ্চে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপি বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন বাংলা নববর্ষকে স্বাগত এবং ফিলিস্তিনের মজলুম জনগণের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে বৈশাখী শোভাযাত্রা বের করে। সকালে নতুন বাজারে দলীয় কর্যালয় থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে টাউনহল মাঠে গিয়ে শেষ হয়।
বর্ষবরণ পর্ষদও শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে।
জেলা প্রশাসন আয়োজিত শোভাযাত্রায় জেলা প্রশাসক মো মুফিদুল আলমসহ বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, মহানগর বিএনপির বৈশাখী শোভাযাত্রায় বিএনপির সহসাংগাঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এ কে এম শফিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলী, অ্যাডভোকেট এম এ হান্নান খান, এ কে এম মাহবুবুল আলম, শামীম আজাদ, রতন আকন্দসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ গ্রহণ করেন।
এদিকে সকাল সাড়ে ৬টায় শহীদ সাগর চত্বর থেকে শোভাযাত্রা বের করে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব। ক্লাব সদস্যদের অংশগ্রহণে শোভাযাত্রাটি গাঙ্গিনাপাড় গিয়ে শেষ হয়। পরে ক্লাবের হলরুমে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভা শেষে প্রধান অতিথি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে হাবিবা মীরা ক্লাব সদস্যদের হাতে উপহার তুলে দেন

শাম্মী আক্তার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হয়েছে। বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। এরপর সেখান থেকে শান্তির বার্তা নিয়ে আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশ নেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এবারের আনন্দ শোভাযাত্রার মূল আকর্ষণ ছিল জুলাই অভ্যুত্থানকে ধারণ করে ২৪ ইঞ্চি কলম, আন্দোলনে শহীদ মুগ্ধের পানি বিতরণের দৃশ্যকে স্মরণ করে বোতলের ভাস্কর্য এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগ করা প্রতীকী বিমান, যার গায়ে লেখা ‘ঢাকা টু দিল্লি’।
এ ছাড়া ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের বর্বরতার চিত্র হিসেবে যুদ্ধ বিমানের ভাস্কর্য প্রদর্শিত হয় শোভাযাত্রায়। গাজার গণহত্যাকে ফুটিয়ে তুলতে চারুকলা চত্বরে কাফনে মোড়ানো প্রতীকী লাশের প্রদর্শনী করা হয়।
শোভাযাত্রায় হাত পাখা, ঢেঁকি, বাঙালি জেলেদের মাছ ধরার পলি, পালকি এবং গরুর গাড়িতে বরযাত্রার প্রতীকী চিত্র তুলে ধরা হয়। যার প্রত্যেকটি বিশেষ অর্থে তাৎপর্যপূর্ণ।
এম আর নয়ন, কুষ্টিয়া (কুমারখালী-খোকসা)
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পহেলা বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রায় দেখা মিলেছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অমর কথা সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন, ফকির লালন শাহ, মুঘল সম্রাট আকবর, গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙ্গাল হরিনাথসহ অন্তত ৩৮ জন বিখ্যাত ব্যক্তিকে। তবে তাঁরা আসল নন, ড্যামি। ড্যামি হলেও তাদের মাধ্যমে দারুণভাবে ফুটে উঠেছে বিখ্যাত এই ব্যক্তিদের অবিকল চেহারা। তাঁদের দেখে মুগ্ধ নতুন প্রজন্মের দর্শনার্থীরা।
এ ছাড়া শোভাযাত্রায় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের চিত্র দেখা গেছে।
আজ সকালে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এমন বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন।

এস এইচ জাহিদ, শাবিপ্রবি প্রতিনিধি
বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) উদযাপিত হয়েছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২। দিনব্যাপী নানা আয়োজনে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নিল বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার।
আজ সকাল সাড়ে ১০টায় ক্যাম্পাসে আনন্দ শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হয় দিনব্যাপী বর্ষবরণের আনুষ্ঠানিকতা।
শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. ইসমাইল হোসেন, হল প্রভোস্ট, প্রক্টর, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক, রেজিস্ট্রারসহ ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আনন্দ শোভাযাত্রায় স্থান পায় বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যমণ্ডিত মুখোশ, আলপনা, ঢাক-ঢোল, কাঠের তৈরি কারুকাজ ও নানা ঐতিহ্যবাহী অনুষঙ্গ। যা বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে ছড়িয়ে দেয় নববর্ষের রঙিন বার্তা।
দিনব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয় বৈশাখী মেলা ও লোকজ অনুষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বসানো হয় পিঠা-পুলি, হস্তশিল্পের স্টল।
এ ছাড়া বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় গান, কবিতা, নৃত্য ও নাটকের মাধ্যমে বাংলা সংস্কৃতির নান্দনিক রূপ তুলে ধরা হয়।
নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড এ. এম. সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, 'পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব। এই আয়োজন আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার সম্মিলিতভাবে যেভাবে এই উৎসব উদযাপন করেছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
এ বি এম ফজলুর রহমান, পাবনা
পাবনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নতুন বছরকে বর্ষবরণ করে আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্যে পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে বাংলার নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া হয়।
জেলা সদরের সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী-শিক্ষক, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নারী-পুরুষ সদস্যরা এবারের আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহণ করেন।
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে ধারন করে ব্যানার, ফেসটুন নিয়ে নতুন পোশাকে বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন গ্রহণকারীরা। শোভাযাত্রায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে ধারণ করে পালকি, ঘোড়ার গাড়ি, মহিষের গাড়ি ও ঢাক-ঢোল নিয়ে বাজনার তালে উৎসবে মেতে উঠেন সবাই।
পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুসারে সকাল ৮টায় নিজ কার্যালয় চত্বরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলামের উপস্থিতিতে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। জাতীয় সংগীতের পরেই বের হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বর থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ চত্বর হয়ে পৌর টাউনহল বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল স্বাধীনতা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে জেলা শিল্পকলা একাডেমি ও স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় পরিবেশিত হয় মনজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। একই সঙ্গে দুই দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার মো. মোরতোজা আলী খান, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাসুদ খন্দকার, জেলা জামায়াতের নায়েবি আমির ইকবাল হোসনসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
হাসান রায়হান, পঞ্চগড় (দেবীগঞ্জ)
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে পালিত হয়েছে পহেলা বৈশাখ। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখে বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে বর্ষবরণের আনন্দ শোভাযাত্রা, বাঙালিয়ানা খাবার, মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।
আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশ নিতে দেখা গেছে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব জনগোষ্ঠীকে। শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ—সবার উৎসবমুখর পদচারণায় রঙিন হয়ে ওঠেছে জনপদ। রং-বেরঙের পোশাক, আল্পনা, ফেস্টুন ও বাঙালিয়ানা প্রদর্শন করে বর্ষবরণের আনন্দে মেতে উঠেছে সব বয়সী মানুষ।
বাঙালির ঐতিহ্য সংস্কৃতিকে ধারণ করে গ্রামীণ লাঠি খেলা প্রদর্শন করে স্থানীয় লাঠিয়াল দল, এ সময় চোখে পড়ে মহিষ ও ঘোড়ার গাড়ি।
উপজেলা শহরের বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে আনন্দ শোভাযাত্রা শেষ দেবীগঞ্জ পাবলিক মাঠে লোকজ মেলা উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান। এ সময় নানা বয়সী মানুষ মেলায় ঘুরতে আসে। মেলায় উপজেলার নব-নারী উদ্যোক্তারা, বিভিন্ন বাঙালিয়ানা ঐতিহ্যবাহী খাবার, পিঠা, পোশাকসহ বিভিন্ন উপকরণের স্টল নিয়ে অংশগ্রহণ করে।
মাঠের উত্তরপ্রান্তে বর্ষবরণ উৎসবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।

আলাউদ্দিন শাহরিয়ার, বান্দরবান
ভিন্ন আয়োজনে বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের উদ্যোগে নববর্ষ উদযাপিত হয়েছে। আজ সকালে স্কুল প্রাঙ্গণে বর্ষবরণ উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি কলেজ অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ শাহজাহান সিরাজ ভুঁইয়া। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কলেজ অধ্যক্ষের সহধর্মিণী সুরভী রহমান।
এ ছাড়া বর্ষবরণ উৎসবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক এবং ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহণ করে।
এদিকে বর্ষবরণ উৎসব ঘিরে দিনব্যাপী হরেক রকমের খাবারের মেলার আয়োজন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। মেলায় বিভিন্ন ক্লাসের শিক্ষার্থীদের ৪০টি স্টল স্থান পায়।
অপরদিকে বর্ষবরণ উৎসবে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও। নাচে-গানে উৎসব মাতিয়ে তোলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা। প্রাণবন্ত বর্ষবরণ উৎসবটি হয়ে উঠে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবার মিলনমেলা।
বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ শাহজাহান সিরাজ ভুঁইয়া বলেন, বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। বাঙালি জাতির ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মকে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত করে তুলতেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষে এই আয়োজন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট সবার অংশগ্রহণে চমৎকার একটা দিন কাটল।
শরীফুল ইসলাম ইন্না, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
সিরাজগঞ্জে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হয়েছে।
‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’—গানের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আনন্দ শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলাসহ নানা কর্মসূচি পালন করে জেলার বিভিন্ন সংগঠন।
বেলা সাড়ে ১১টায় সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির উদ্যোগে শহরে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান রানা, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন।
এছাড়া বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে সকাল থেকেই সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও আনন্দ শোভাযাত্রা শহর প্রদক্ষিণ করে। নতুন বর্ষকে স্বাগত জানাতে সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন স্থানে গান ও নৃত্য পরিবেশন করা হয়। এদিকে এই বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে শহরের বাজার স্টেশন মুক্তির সোপানে শুরু হয়েছে ৪০ দিন ব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্যমেলা।