বৈষম্যবিরোধী নেতার কাছে ‘জিলাপি খেতে’ চাইলেন ওসি, ফোনালাপ ভাইরাল

ঠিকাদারি কাজ পাওয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতাকে মোবাইলফোনে ‘জিলাপি খাওয়ানোর’ কথা বলেছেন কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। ওই ফোনালাপ সংক্রান্ত অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে অডিও রেকর্ডটি এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ওসি।
ভাইরাল হওয়া অডিও রেকর্ডে ওসি মনোয়ার হোসেনকে বলতে শোনা যায়, ‘সেফটি সিকিউরিটি দিলামতো সারা জীবন। তোমরা যে ১৮ লাখ টাকার কাজ করে ১০ লাখ টাকা লাভ করলা, ১০ টাকার জিলাপি কিনে তো পাবলিকেরে খাওয়ালে না। খাইয়া যে, একটু দোয়া কইরা দেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের। তোমার জায়গায় আমি হইলে সুদের ওপরে টাকা আইনা আগে জিলাপি খাওয়াইতাম। দোয়াডা হইলো সবার আগে। পরেতো বিল পামু, তাই না?’
ফোনালাপে ওসি আরও বলেন, ‘ঠিক আছে তাহলে, জিলাপির অপেক্ষায় রইলাম নাকি? না না, জিলাপি হইলেই হইবো। এক প্যাঁচ আধা প্যাঁচ জিলাপি দিলে হইবো। বিভিন্ন পারপাসে হইল, পাবলিক খাইল আরকি, বোঝ না?’ এ সময় বৈষম্যবিরোধী ওই ছাত্রনেতা বলেন, ‘বিল-টিল পাই, একটা অ্যামাউন্ট দেখব নে।’ তার এ কথার উত্তরে ওসি বলেন, ‘ঠিক আছে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইটনা শাখার সংগঠক আফজাল হুসাইন শান্ত বলেন, ‘আমি ইটনা উপজেলার বলদা হাওরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১ হাজার ৪৮০ মিটার ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ পাই টেন্ডারের মাধ্যমে। কাজ শেষ হওয়ার পরে থানায় গেলে তিনি (ওসি) জিলাপি খেতে টাকা চাইতেন। তখন রেকর্ড করতে পারিনি। পরে ওসির সঙ্গে ফোনে আমার কথা হলে তিনি আমার কাছে ফসল রক্ষা বাঁধ করে যে লাভ হয়েছে, সেখান থেকে জিলাপি খেতে চান।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে আফজাল হুসাইন বলেন, ‘আমি সরকারি কাজ পেয়েছি টেন্ডারের মাধ্যমে। এখানে ওসি আমার কাছে কীভাবে জিলাপি খেতে চাইতে পারেন? আমার কাছে যদি জিলাপি খাইতে চাইতে পারেন, তাহলে সাধারণ মানুষ কতটা শান্তিতে আছে বুঝতে পারছেন।’
এ বিষয়ে ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি অডিও রেকর্ডটি শুনেছি।’ তিনি দাবি করেন, এই রেকর্ডটা এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা হতে পারে।
ওসি মনোয়ার হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি যতটুকু শুনেছি, এই ছেলের নামে পিআইসির টেন্ডার নেই, তাহলে আমি কেন এই ছেলের কাছে জিলাপি চাইব? হয়তো কোনো একসময় এই ছেলে আমাকে ফোন দিয়েছিল, ওই সময়টা ঠিক রেখে এইআইয়ের মাধ্যমে রেকর্ডটি তৈরি করেছে। আর যে রেকর্ডটা মানুষজন আমাকে শুনিয়েছে, এতে তো অনৈতিক কিছু দেখছি না। আমি মানুষকে জিলাপি খাওয়াতে বলেছি।’
টাকার বিষয়ে প্রশ্ন করলে ওসি মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই ছেলে ছোট মানুষ। এই ছেলের কাছে টাকা চাওয়ার প্রশ্নই আসতে পারে না।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন বলেন, ঘটনার তদন্তের দাবি জানাই।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত করব। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।