দেশে প্রথমবার উন্মোচিত হলো বাংলা ডোমেইনে ই-মেইল ব্যবহার

একটি বহুভাষিক ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিটিআরসিতে ইউনিভার্সেল অ্যাকসেপ্টেন্স দিবস উপলক্ষে দেশে প্রথমবার উন্মোচিত হলো বাংলা ডোমেইনে ই-মেইল ব্যবহার। আজ মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বিটিআরসির কার্যালয়ে দিনটি উপলক্ষে ‘বিটিআরসি.বাংলা’ ডোমেইনে বিটিআরসির নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং ইমেইল এপ্লিকেশন উদ্বোধন করেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম (বিআইজিএফ) এর যৌথ আয়োজনে এবং ইন্টারনেট করপোরেশন ফর অ্যাসাইনড নেমস অ্যান্ড নম্বরস (আইসিএএনএন) এর সহযোগিতায় আয়োজিত কারিগরি কর্মশালা ও বিশেষ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রযুক্তিবিদ, গবেষক, টেলিযোগাযোগ খাত সংশ্লিষ্ট অংশীজনসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা।
সূচনা বক্তব্যে বিটিআরসির মহাপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফিউল আজম পারভেজ ইউনিভার্সেল অ্যাকসেপ্টেন্স দিবস এর প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব তুলে ধরেন। স্বাগত বক্তব্যে বিআইজিএফের মহাসচিব মোহাম্মদ আবদুল হক অনু বাংলা ডোমেইনকে জনপ্রিয় করতে বিটিআরসির সহযোগিতা কামনা করেন।
মূল প্রবন্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ বলেন, ইন্টারনেট জগতে ৪৯.২ ভাগ কনটেন্ট ইংরেজি, অথচ ইংরেজিভাষী জনসংখ্যা পৃথিবীতে মাত্র ১৬%। ফলে বহু দেশের বহু ভাষার মানুষ তার নিজস্ব ভাষায় ইন্টারনেট কনটেন্ট ব্যবহার করতে পারছে না। তিনি ইন্টারনেটে বাংলা ভাষা ব্যবহার এবং ইউনিভার্সেল অ্যাকসেপ্টেন্স এর প্রেক্ষাপট, এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত তথ্যবহুল উপস্থাপনা প্রদান করেন।
ইউনিভার্সেল অ্যাকসেপ্টেন্স এর কারিগরি দিক আলোকপাত করেন বিটিআরসির উপপরিচালক ড. শামসুজ্জোহা।
অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে আইসিএএনএনের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সমীরণ গুপ্ত বলেন, যারা ইংরেজি ভাষাভাষি নয়, তাদের জন্য বহুভাষিক ইন্টারনেট সুবিধাটা গুরুত্বপূর্ণ। ডোমেইন সংক্রান্ত বিষয়ে যেকোনো প্রকৌশল ও কারিগরি সহায়তা দিতে আইসিএএনএন প্রস্তুত রয়েছে।
আইকান বোর্ড-এর পরিচালক সাজিদ রহমান বলেন, ইন্টারনেট সবাইকে এক সুতোয় বাধার জন্য চালু হলেও ভাষার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই তা বিভক্তি তৈরি করেছে। আমরা যদি অন্তর্ভূক্তিমূলক ডিজিটাল ভবিষ্যত গড়তে চাই, তবে সকল মানুষকে সমানভাবে ইন্টারনেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। এজন্য বিটিআরসির এই উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইন্টারনেট জগতে যেকোনো ভাষার সর্বজনীন ব্যবহারের কারিগরী চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন বিটিসিএলের ডোমেইন ডিভিশনের ম্যানেজার মোস্তফা আল মামুন এবং আম্বার আইটির মাহফুজুর রহমান।
সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী বলেন, যোগাযোগের জন্য মাতৃভাষার বিকল্প নেই। অন্য ভাষায় নিজেকে প্রকাশ করতে গেলে অনেক ক্ষেত্রেই তা আরও জটিল হয়ে ওঠে। অনেক সময়ই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয় অন্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ডিজিটাল ডিভাইড কমিয়ে আনতে কানেক্টিভিটি ও ইন্টারনেট ব্যবহার- এই দুই ক্ষেত্রেই ব্যবধান কমিয়ে আনতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার মাহমুদ হোসেন, বিআইজিএফ চেয়ারপারসন মোহাম্মদ আমিনুল হাকিমসহ বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।